প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সম্প্রতি ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তকরণে কারচুপির অভিযোগ উঠে এসেছিল ৪ সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন বারুইপুর পূর্ব ১৩৭ নম্বর বিধানসভা কেন্দ্রের ERO দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, সহকারী AERO তথাগত মণ্ডল, ময়নার ERO বিপ্লব সরকার, AERO সুদীপ্ত দাস এই ৪ আধিকারিককে সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদারের বিরুদ্ধেও একই নির্দেশ উঠে এসেছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ কিছুতেই মানতে চায় না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর এবার সেই নিয়ে রাজ্য এবং নির্বাচন কমিশনের সংঘাত তুঙ্গে।
সাসপেন্ড নিয়ে সাফাই মুখ্যসচিবের
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের নির্দেশ রাজ্য সরকার ঠিকভাবে পালন না করায় গত ৮ আগস্ট দ্বিতীয় চিঠি পাঠিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নবান্নের কাছে জবাব চেয়েছিল কমিশন। শেষে গত সোমবার মুখ্যসচিব নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান, ওই চার আধিকারিককে সাসপেন্ড ও FIR করা হবে না। তবে তাঁদের মধ্যে দু’জন যথাক্রমে বারুইপুর পূর্বের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদার ও ময়নার AERO সুদীপ্ত দাসকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাফাই হিসেবে মুখ্যসচিব জানিয়েছে যে, সরকারি আধিকারিকদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাই এই অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই অধস্তনদের উপর কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ছাড়াই কোনও সিদ্ধান্ত নিলে, তা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হয়ে যেতে পারে।
রাজ্যকে সময় বেঁধে দিল কমিশন
টিভি ৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের পরই কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জানা গিয়েছে, কমিশন ই-মেল মারফত বুধবার বিকেল ৫ টায় মুখ্যসচিবকে দিল্লির জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডাকা হয়। তাই সেইমতো এদিন ডেডলাইন শেষের প্রায় ৩০ মিনিট আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পৌঁছন মনোজ পন্থ। আর সেখানে প্রবল চাপের মুখে ফেলে দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে বৈঠক। শেষে কমিশনের নির্দেশের পর ওই চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে নবান্ন, সে সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দেন তিনি। এবং পরবর্তী পদক্ষেপ পর্যন্ত ওই চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন তিনি।
আরও পড়ুন: ওয়েটিং টিকিট নিয়ে ভুল কামরায় উঠলে কী হবে? জানুন রেলের নিয়মকানুন
প্রসঙ্গত, আধিকারিকদের সাসপেন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে তদন্ত ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যকে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিল। আর সেই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছিল ঝাড়গ্রামের এক সভায়। সেখানে কেন্দ্র এবং কমিশনকে একযোগে নিশানা করেছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আমি কারও কোনও শাস্তি হতে দেব না।’’ এমনকি নাম না করে নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির বন্ডেড লেবার বলেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।