পাকিস্তানকে বুড়ো আঙুল! চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়ণে টেন্ডার ডাকল ভারত!

India invites tender for construction of hydroelectric project on Chenab

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাক সম্পর্ক কোন খাতে বইবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিগত দিনগুলিতে সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি নিয়ে বারংবার ভারতের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছে পাকিস্তান। যদিও তাতে লাভের লাভ হয়নি কিছুই। পুরনো সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও সরে আসেনি দিল্লি!

আর এরই মাঝে এবার দীর্ঘ 40 বছর ধরে আটকে থাকা কাজ বাস্তবায়নে হাত লাগালো ভারত। জানা যাচ্ছে, কার্যত পাকিস্তানের আপত্তি উড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা জম্মু ও কাশ্মীরের চন্দ্রভাগা নদীর ওপর সাওলকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য এবার দরপত্র ডাকলো দিল্লি।

পাকিস্তানের আপত্তি উড়িয়েই শুরু হচ্ছে প্রকল্পের কাজ!

TOI-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শতকের 80-র দশকে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এবার জোর দিয়েছে ভারত। রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্প রূপায়ণে আপত্তি জানিয়ে এসেছে পাকিস্তান। তবে অবশেষ 40 বছর পেরিয়ে পাকিস্তানের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করছে দিল্লি।

সেই মর্মে, বুধবার, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডিং-এর মাধ্যমে সাওলকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের টেন্ডার ডাকে ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন। জানা যাচ্ছে, NHPC এবং জম্মু ও কাশ্মীর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হবে এই প্রকল্পের কাজ।

জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যুতের চাহিদা মিটবে এই প্রকল্প থেকেই

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ বাধা কাটিয়ে চন্দ্রভাগার উপর যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হেঁটেছে ভারত, তা মূলত কাশ্মীরের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিকল্পনা করা হয়েছে এই প্রকল্প থেকেই 1856 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এটি জম্মু এবং কাশ্মীর অঞ্চলের বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা মেটাবে বলেই আশাবাদী অনেকেই। বলা বাহুল্য, আগামী 10 সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে একাধিক গ্রাম

রিপোর্ট অনুযায়ী, চন্দ্রভাগার উপর সাওলকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে গেলে চন্দ্রভাগা নদীর তীরবর্তী একাধিক গ্রাম চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। শোনা যাচ্ছে, সেই ক্ষতির কথা মাথায় রেখেই ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের অধীনেই ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের থাকার বন্দোবস্তও করবে সরকার।

চাপে পড়বে পাকিস্তান!

1960 সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি। আর এই চুক্তির হাত ধরেই সিন্ধু এবং তাঁর 5টি উপনদীর জল ভাগ করে নিত দুই প্রতিবেশী। তবে এই নদীগুলির মধ্যে মূলত সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা পাকিস্তানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বলা বাহুল্য, এই নদীগুলির জলের ওপর পাকিস্তানের 80 শতাংশ কৃষিকাজ নির্ভরশীল।

মূলত সেই কারণেই, দীর্ঘ বহু বছর ধরে চন্দ্রভাগার উপর ভারতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়ণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান। তবে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরই পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি স্থগিত করে দেয় দিল্লি। যদিও এরপর থেকে বহুবার নরমে-গরমে ভারতকে পুরনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানায় পশ্চিমের দেশ। তবে কোনও মলমেই কাজ হয়নি। ইসলামাবাদের শত অনুরোধ সত্বেও পুরনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি দিল্লি।

এমতাবস্থায়, সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি স্থগিত থাকায় চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পাকিস্তানের সম্মতির প্রয়োজন নেই। তাই সম্মতি ছাড়াই পাকিস্তানের আপত্তি উড়িয়ে এবার চন্দ্রভাগার উপর পরিকল্পিত সাওলকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত লাগিয়েছে ভারত। বলে রাখা ভাল, সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি স্থগিত হওয়ায় এমনিতেই চাপে রয়েছে পাকিস্তান, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই নয়া প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের কপালে চিন্তার ভাঁজ কয়েকগুণ বাড়বে।

অবশ্যই পড়ুন: ভারতের ১ নম্বর অধিনায়ক হয়ে উঠলেন শুভমন! ওভাল টেস্টে ভাঙলেন ঐতিহাসিক রেকর্ড

উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে প্রক্রিয়াজাত নানান অসুবিধার কারণে চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে দীর্ঘ 40 বছর পেরিয়ে অবশেষে নয়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা। রিপোর্ট অনুযায়ী, চন্দ্রভাগা নদীর উপর এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প মূলত দুটি ধাপে সম্পন্ন হবে। যার জন্য খরচ পড়বে মোট 22,704 কোটি টাকা ।

Leave a Comment