বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: একদিকে ভারতের ওপর 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে ক্ষমতা জাহির করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের সাথে বড়সড় বাণিজ্য চুক্তি সেরেছে আমেরিকা।
বুধবার ভারতের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পরই সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিশাল তৈল ভান্ডারকে কাজে লাগাতে এবং তার উন্নতির জন্য আমেরিকা এবং পাকিস্তান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। সেই মর্মে নাকি ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদের সাথে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সেরেছে ওয়াশিংটন।
পাকিস্তানের সাথে বড় চুক্তি আমেরিকার
বুধবার ট্রুথ সোশালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমেরিকা এবং পাকিস্তান যৌথভাবে এবার থেকে পাকিস্তানের বিশাল তেলের মজুদ বের করে আনবে। সেই লক্ষ্যেই ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদের সাথে চুক্তি হয়ে গিয়েছে ওয়াশিংটনের। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, 2024 সালে আবিষ্কৃত অফশোর তেল ও গ্যাস মজুদ যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মজুদ, এবার পাকিস্তানের সেই তেল এবং গ্যাস ভান্ডার আমেরিকার নজরে। তা নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে দুই দেশ!
এদিন ট্রাম্প স্পষ্ট জানান, পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে 6 থেকে 8 ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। তেল থেকে শুরু করে গ্যাস, সোনা, কয়লা এবং তামা সহ অন্যান্য বহু মূল্যবান সম্পদের মজুদ নিয়ে কাজ করতে চায় আমেরিকা। রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের সাথে চুক্তি অনুসারে এবার পশ্চিমের দেশের বৃহৎ তেল ভান্ডারের উন্নতিতে নেতৃত্ব দেবে আমেরিকার এক তেল কোম্পানি। যদিও ওই সংস্থার নাম প্রকাশ্যে আসেনি।
কতটা লাভ হবে পাকিস্তানের?
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থেকে যায়, নিজস্ব তৈলভান্ডার আমেরিকার হাতে তুলে দিয়ে আদতে কতটা লাভবান হবে পাকিস্তান? সেই সূত্রে বলি, এতদিন সীমিত প্রযুক্তি ও আর্থিক অক্ষমতার কারণে তেল উত্তোলন করতে পারছিল না পাকিস্তান। তবে এবার দাদা আমেরিকার ভরসাতে এগোবে ইসলামাবাদ।
বলা বাহুল্য, পাকিস্তান মূলত তেলের 85 শতাংশ এবং গ্যাসের 29 শতাংশের চাহিদা মেটায় আমদানি থেকে। তবে এবার ট্রাম্পের সহায়তায় নিজস্ব মজুদ থেকে বড় আয়ের আশায় দিন গুণছে পাকিস্তান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের বিশালাকার তৈল ভান্ডারে আমেরিকা প্রবেশাধিকার পাওয়ায় আগামী দিনে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অবস্থান শক্ত করবে ট্রাম্পের দেশও। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে নাকি ভারতকেও তেল বিক্রির আশা রাখছেন ট্রাম্প!
অবশ্যই পড়ুন: ভারতের কড়া মনোভাবে শুল্ক আরোপ নিয়ে কিছুটা নরম ট্রাম্প, দর কষাকষি চালানোর ইঙ্গিত
পাকিস্তানকে খুশি করতেই কি ভারতের উপর শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প?
বুধবার, কার্যত হুঙ্কার ছেড়ে ভারতের ওপর 25 শতাংশের শুল্কের বোঝা চাপান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ হিসেবে একাধিক বিষয়ে উল্লেখ করেন তিনি। এদিন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ব্রিকস এবং আমেরিকার সাথে ভারতের 34 বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের ঘাটতি রয়েছে। বিগত দিনগুলিতে ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেকটাই কমেছে!
শুধু তাই নয়, ভারতের ওপর 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রাশিয়ার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতার কথাও উল্লেখ করেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। আসলে, বহুবার পশ্চিমি দুনিয়া, মূলত NATO ও আমেরিকার তরফে কড়া নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে ভারত। মূলত সেই কারণেই, ভারতের ওপর 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে বন্ধুকে সাজা দিয়েছেন ট্রাম্প! তবে অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানের সাথে নতুন চুক্তির মাধ্যমে ওদেশের তৈল ভান্ডারকে কাজে লাগানোর স্বার্থে ইসলামাবাদকে খুশি করতেই দিল্লির প্রতি কড়া হয়েছে ওয়াশিংটন। যদিও, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুল্ক নিয়ে ভারতের সাথে দর কষাকষি চলবে!