প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দীর্ঘ সাধনার পর জেলমুক্তি লাভ করল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। গত মঙ্গলবার অষ্টম সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পর হাইকোর্টের নাকতলার বাড়িতে ফিরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে বাড়ি ফিরতেই রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাঁকে। দল থেকে নিজের সাসপেনশন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন তিনি। এমনকি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উদ্দেশে খোলা চিঠিও দিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে তাই এক্ষেত্রে দলের কী মতামত তা জানতে সকলের মনে প্রশ্ন জাগছে। এমতাবস্থায় পার্থকে নিয়ে এবার দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল কালীঘাট।
সাসপেনশন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা কালীঘাটের
রিপোর্ট মোতাবেক জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ বুধবার সন্ধেয় কালীঘাট থেকে তৃণমূল স্পষ্ট করে দলের মুখপাত্রদের বলে দেওয়া হয়েছে যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে যদি সংবাদমাধ্যম তৃণমূলের অবস্থান জানতে চায় তাহলে বলতে হবে, উনি এখনও সাসপেন্ডেড নেতা। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে ৬ বছরের জন্য দল সাসপেন্ড করেছে। তার মধ্যে মাত্র সওয়া তিন বছর হয়েছে। এখনও ২ বছর ৭ মাস সাসপেনশনের মেয়াদ বাকি রয়েছে। এছাড়াও কালীঘাটে তৃণমূলের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে যে অভিযোগ উঠেছিল, তার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তাই এখনও নির্দোষ প্রমাণিত হননি। যত দিন না তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন, ততদিন তাঁকে সংগঠন বা দলের সক্রিয় সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শুধু পার্থ নন, মানিক ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
বিধানসভাতে যাবেন পার্থ
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, “পার্থর সাসপেনশন প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই। হিসাব মতো, এখনও তিনি বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক। তাই চাইলে তিনি বেহালায় ঘুরে বেড়াতেও পারেন। বিধায়ক হিসাবে তাঁর সেই অধিকার রয়েছে। উনি বিধানসভাতেও যেতে পারেন। কিন্তু দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা তাঁর সঙ্গে থাকবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।” এদিকে পার্থ এখনও যেহেতু বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক, তাই বিধানসভায় যাওয়ার তাঁর পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু বিধানসভায় গেলেই তৃণমূলের অন্য বিধায়করা যে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, তা হয়তো হবে না। কিন্তু তবুও পার্থ জানিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই বিধানসভায় যাবেন। এমনকি তিনি শুধু সভায় যাবেন না হাত তুলে তাঁর কথা বলারও চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন: বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য কলকাতা পুরসভায় লম্বা লাইন! এবার বড় নির্দেশ মেয়রের
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৩ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে তিনি শুধু একা নন, একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট ও আরও একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল সোনা ও নগদ মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে কালীঘাটের এক নেতা জানিয়েছেন যে, এটা ঠিক দলের অনেক নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর বাড়ি থেকে যেভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নগদ ও সোনাদানা উদ্ধার হয়েছে তা দৃশ্য দূষণ। সুতরাং ওঁর ছায়াও মাড়াবে না দল।