সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষায় এবার বিরাট বদল আনছে ভারত সরকার। হ্যাঁ, বিএসএফ জওয়ানদের হাতে এবার এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে, যা সীমান্ত রক্ষার পদ্ধতি বদলে দেবে। হ্যাঁ, তাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরা (Body-Worn Camera)। ইতিমধ্যেই 5000-এর বেশি ক্যামেরা সীমান্তে পাঠানো হয়েছে, যা রাতের অন্ধকারে পরিষ্কার ভিডিও রেকর্ড করতে পারছে।
সবথেকে বড় ব্যাপার, এই ক্যামেরাগুলো শুধুমাত্র ভিডিও রেকর্ড করাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং, এগুলির সাহায্যে সীমান্তে ঘটে চলা দিনের পরের দিন অপরাধ, অনুপ্রবেশ বা বিএসএফের উপর হামলার সম্পূর্ণ খুঁটিনাটি তথ্য এবং প্রমাণ সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে আর কোনোরকম লুকোচুরি নয়, বরং প্রকাশ্যে আসবে আসল ঘটনা।
কেন নেওয়া হচ্ছে এই ব্যবস্থা?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সম্প্রতি বিএসএফ-এর সদর দপ্তরের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে অনুমোদনও দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে সামনে রেখেই নেওয়া হচ্ছে।
প্রথমত, বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরা ব্যবহার করে বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, কিংবা চোরাচালানের ঘটনার রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। আর দ্বিতীয়ত, সীমান্তে ধরা পড়া বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আঙ্গুলের ছাপ বা চোখের রেটিনা স্ক্যান করে তা বিদেশী রেজিস্ট্রেশন অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের তথ্যভিত্তিক ডেটাবেস তৈরি হয়ে যাবে।
BSF equips soldiers with 5,000 body worn cameras along the India-Bangladesh border to capture real-time evidence during deportation of illegal infiltrators & attempted attacks on security personnel. pic.twitter.com/ZjDNi86faq
— Defence Core (@Defencecore) July 27, 2025
কীভাবে কাজ করবে এই ক্যামেরা?
জানা গিয়েছে, এই বিশেষ বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরাগুলি রাতের অন্ধকারে একটানা 12 থেকে 14 ঘন্টা পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড করতে পারবে। ফলে সীমান্তে ঘটা প্রতিটি মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি হবে। বিশেষ করে সীমান্তে যে সমস্ত পোস্টে বারবার অনুপ্রবেশ, চোরাচালান বা বিএসএফের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানেই প্রাথমিকভাবে ক্যামেরাগুলিকে লাগানো হচ্ছে।
তবে এই ক্যামেরার পাশাপাশি কিছু নির্বাচিত সীমান্ত পোস্টে বায়োমেট্রিক স্ক্যানারও বসানো হচ্ছে। এতে যারা অনু প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়ছে, তাদের আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের ছবি রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। আর এই তথ্য দেশের অভ্যন্তরে থাকা বিদেশি নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির জন্যই কাজে লাগানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনূস ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে উস্কানির সুর গাইছে। হ্যাঁ, তিনি ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলছে বারংবার। আর এবার সেই অভিযোগের কড়া জবাব দেবে ভারত। ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিওই বলে দেবে যে, কে কাকে আসলে আক্রমণ করেছে, আর কে আত্মরক্ষার তাগিদে গুলি চালিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রবীণদের জন্য দুই শ্রেণিতে মিলতে পারে ট্রেনের টিকিটের ছাড়! বড় আভাস রেলমন্ত্রীর
পরিসংখ্যান কী বলছে?
এদিকে রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের 15 জুলাই পর্যন্ত বিএসএফ মোট 1372 জন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে আটক করতে পেরেছে। আর অন্যদিকে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের হাতে আরও 3536 জন ধরা পড়েছে, যারা ভারত থেকে বাংলাদেশের ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পাশাপাশি গত বছর ভারতে প্রবেশকারীর সংখ্যা ছিল 2425, আর বাংলাদেশে ফেরা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ছিল 1049। এদিকে বিএসএফের উপর হামলার ঘটনা গত বছর ছিল 77টি, আর এবছরের জুন মাস পর্যন্ত হয়েছে 35টি।