প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নদিয়ার তেহট্টে (Tehatta) নিখোঁজ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু! স্থানীয় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে উঠল খুনের অভিযোগ! তীব্র উত্তেজনা নিশ্চিন্তপুরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই এলাকাবাসীর মারধরে ওই শিশুরই দুই প্রতিবেশীর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। এমতাবস্থায় এলাকা নিরাপত্তা এবং তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন ।
সারাদিনই খোঁজ মেলেনি স্বর্ণাভর!
রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মত গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার দুপুর ৩টে নাগাদ মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় নদিয়ার তেহট্ট থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বর্ণাভ বিশ্বাস। অভিযোগ এদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতেই ছেলে বাড়ি না আসায় চিন্তায় পড়ে পরিবার। তারপর শুরু হয় খোঁজখবর। রাত পর্যন্ত এলাকায় খুঁজে তার হদিশ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন পরিবারের লোকজন। নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও ছেলেটির সন্ধান চেয়ে প্রচার চালানো হয়। তা সত্ত্বেও গোটা রাত বালকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর আট বছরের ছেলের মৃত্যুর খবর পায় গোটা পরিবার।
মৃত্যুশোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার
আজ শনিবার সকাল থেকেই নিশ্চিন্তপুর গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দেখা যায় বাড়ি থেকে সামান্য দূরের একটি পুকুরে ত্রিপল মোড়া অবস্থায় এক শিশুর মৃতদেহ ভাসছে। এরপর ওই দেহ উদ্ধারের পর দেখা যায়, তা পচে গেছে এবং শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাত্র ৮ বছর বয়সী ছেলের এইরূপ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবেশী উৎপল মণ্ডলই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরেই নাকি উৎপল শিশুটিকে অপহরণ করে খুন করেছে এবং প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশে দেহটি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এরপর স্বর্ণাভর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকা জুড়ে।
মৃত দুই অভিযুক্তও
গ্রামবাসীদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত উৎপল মণ্ডলের বাড়ি ঘেরাও করে এবং বাড়ির ভিতর জোর করে ঢুকে পড়েন তাঁরা। বাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি বাড়ির পাশে থাকা চটের গুদামেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় দুই অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মারধর করা হয়। অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তেহট্ট থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। কোনওরকমে উৎপল ও সোমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। গোটা গ্রামে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে বিরাট প্রতারণা! হুগলির TMC কর্মীকে পিটিয়ে মুচলেকা লেখাল জনতা
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বালক হত্যার এই ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, ‘মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনওরকম গুজবে কান না দেওয়ার জন্য এলাকার মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’ কিন্তু কিছুতেই যেন আতঙ্ক ও উত্তেজনার পরিবেশ কাটতেই চাইছে না। এইমুহুর্তে প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হলেও গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ এখনও প্রবল।