পুলকার-বাসের জন্য কঠোর ব্যবস্থা! বড় ঘোষণা পরিবহন দফতরের

School Bus Poolcar New Rules

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সম্প্রতি উলুবেড়িয়ায় পুলকার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল তিন শিশু। অকালে এই তিন শিশুর প্রাণ চলে যাওয়ায় রীতিমত নড়ে গিয়েছিল রাজ্য পরিবহন দপ্তর। তাই এবার পুলকার পরিষেবার আমূল সংস্কারে উদ্যোগী হল দপ্তর। স্কুলের পুলকার এবং বাসের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা (School Bus Poolcar New Rules) জারি করা হল। বর্তমানে যেহেতু কলকাতা, হাওড়া, হুগলির আংশিক, দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলকার চলে তাই সেক্ষেত্রে সব পুলকারকে নিয়মে বাঁধতে আসছে একাধিক নিয়ম।

উচ্চ বৈঠক পরিবহন মন্ত্রীর

রিপোর্ট মোতাবেক গতকাল অর্থাৎ সোমবার পুলকার মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী-সহ শীর্ষ আধিকারিকেরা। আর সেই বৈঠকে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার্থে পুলকার দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে বলে মন্তব্য করেন পরিবহণমন্ত্রী। স্কুল, অভিভাবক ও গাড়ি মালিকদের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে রাজ্য। বৈঠকে উপস্থিত আইজি ট্রাফিক সুকেশ জৈনকে বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলকারগুলি নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত

বৈঠকে এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে এখন থেকে আর নন ট্রান্সপোর্ট গাড়িতে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাবে না। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট স্কুলের নথিভুক্ত গাড়িতেই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হবে। প্রতিটি জেলার তথ্য নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করতে। সাদা নম্বর প্লেট থাকা পুলকারগুলি নিয়েও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, এই সাদা প্লেট নম্বর থাকা পুলকারগুলিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে। গাড়ির স্বাস্থ্য কতটা ভাল, সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যদি রিপোর্ট সন্তোষজনক হয় তাহলেই সাদা প্লেট থাকা গাড়িগুলি পুলকার হিসেবে চালানোর অনুমতি পাবে। পাশাপাশি অভিভাবকেরা গাড়ির চালকের নাম, মোবাইল নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি রাখার পাশাপাশি ‘এমপরিবহণ মোবাইল অ্যাপ’ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন।

ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন বার্তা শিশুদের

পুলকারকে নিয়মে বাঁধতে পরিবহন দপ্তরের বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে নির্দিষ্ট রুটে নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকেই পুলকারে যেন ওঠা-নামা করানো হয় বাচ্চাদের। এমনকি স্কুলের পড়ুয়াদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে বলে নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে। অর্থাৎ গাড়ির ওভারটেক, ওভার স্পিডিং, সিট বেল্ট ব্যবহার না-করার ফলে কী হতে পারে, সবকিছু নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অবগত করাতে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। এবং অবশ্যই পরিবহণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, এবং চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর গাড়ির বাইরে ও ভিতরে লিখে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাড়ল গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি আবেদনের সময়সীমা!

পরিবহণ দফতরের নির্দেশ, স্কুলবাস ও পুলকারের ক্ষেত্রে সফ্‌ট টপ গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। বাসের রং করাতে হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সুদীপ দত্ত জানিয়েছেন, ‘‘বৈঠকের আলোচনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে পরিবহণ দফতর থেকে বলা হয়েছে যে সব ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি পুলকার হিসাবে চালানো হচ্ছে, সেগুলি যেন আগামী তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক গাড়িতে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়। এই নিয়মের পর আমাদের পরিষেবা দিতে আরও সুবিধা হবে।’’ যদিও পরিবহণ দফতরের এই উদ্যোগকে ‘মুখরক্ষার চেষ্টা’ বলে সমালোচনা করছেন বিরোধীরা।

Leave a Comment