প্রতি পরিবারে অন্তত একজন সেনা! এটিই দেশের একমাত্র ‘সৈনিক গ্রাম’

Soldier Village of India

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভোরের আলো ফোটার আগেই যোগীরাজ্যের গঙ্গা তীরবর্তী এক শান্ত গ্রামে শুধুমাত্র শোনা যায় বুটের খটখট আওয়াজ! যেখানে দেশের অধিকাংশ গ্রামের দিনের শুরু হয় ক্ষেত খামারের কাজ দিয়ে, সেখানে গাজীপুর জেলার এই ছোট্ট গ্রামটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, এখানে দিনের শুরু হয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন নিয়ে তরুণদের ভিড়ে। এমনকি প্রত্যেক বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো সেনাদের ছবি, আর মনে অদম্য ইচ্ছা। আসলে আজ আমরা বলছি ভারতের ‘সৈনিক গ্রাম’ (Soldier Village of India) গহমরের কথা, যেখানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে একজন করে সেনা জওয়ান।

সেনাবাহিনীর সাথে আধ্যাত্মিক সংযোগ এই গ্রামের

আসলে গহমরকে দেশের সবথেকে বড় সৈনিক গ্রাম বলা হয়। মনে করা হয়, এই একটি গ্রাম থেকেই প্রায় ৫০০০ এর বেশি মানুষ ভারতীয় সেনা, নৌ সেনা, বায়ু সেনা বা অন্যান্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, এবং বর্তমানে দেশের সেবা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের অন্য কোনও গ্রামে এই নজির দেখা যায় না বললেই চলে। সবথেকে বড় ব্যাপার, এখানকার অনেক পরিবার স্বাধীনতার আগের দিন থেকেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। তাই এই গ্রামের কোনও বাড়িতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া কোনও সদস্য নেই, তা বিরল দৃশ্য।

এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সেনাবাহিনী কথাটা ভাবনাটা শুধুমাত্র স্বপ্ন নয়, বরং নিত্যদিনের অভ্যাস। সকালের শারীরিক অনুশীলন শুধুমাত্র ফিটনেসের জন্য নয়, বরং পুরো গ্রামের এক আধিক্যিক মেলবন্ধন। অবসরপ্রাপ্ত সেনারা তরুণদের শেখায় শৃঙ্খলা, ধৈর্য আর মৌলিক ধারণা। পাশাপাশি প্রতিযোগিতার জন্য মানসিক প্রস্তুতিও শেখানো হয়। আর ছোট স্কুলগুলো শিশুদের শরীরচর্চা করতে উৎসাহ দেয়, যাতে শৈশব থেকেই সৈনিকের ভিত জন্মে যায় শিশুদের মধ্যে।

সবথেকে বড় ব্যাপার, এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া শুধুমাত্র চাকরি নয়, বরং সম্মান এবং পরিচয়। কর্মসংস্থান সীমিত হলেও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানে পরিবারের আত্মবিশ্বাস ফেরানো এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদা বাড়ানো। সে সিয়াচেনে বরফে পোস্টিং হোক, কিংবা ভারতীয় নৌ-সেনায় প্রমোশন, সবকিছুর সাথে গ্রামের সদস্যদের মন জড়িয়ে আছে।

আরও পড়ুন: দুশোর বেশি ফ্লাইট বাতিল, বিলম্ব শতাধিক! কেন বিভ্রাটে পড়ল ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা?

সময়ের সঙ্গে বাড়ছে লড়াই

তবে দিনের পর দিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এখন বাছাইয়ের পরীক্ষা অনেকটাই কঠিন। তাই প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হয়। এখন অনেক অবসরপ্রাপ্ত সেনারা নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালিয়ে এই গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য সাজিয়ে তুলছেন। আর যখন কোনও ছেলে ট্রেনিংয়ে যোগ দিতে রওনা দেয়, তখন গোটা গ্রামের মানুষই একসঙ্গে এসে তাকে বিদায় জানায়। আসলে সেনাবাহিনীদের প্রতি এক আধ্যাত্মিক মেলবন্ধন এই গ্রামের, যা গোটা ভারতে হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজলেও টের পাওয়া যাবে না।

Leave a Comment