প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর গত এপ্রিলেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাতারাতি বাতিল হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি। ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলটাই বাতিল করা হয়েছিল। যা নিয়ে এখনও চাপানউতোর শেষ হয়নি, এমতাবস্থায় আদালতে এখনও ঝুলছে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যত। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে চলছে মামলা। আর এবার সেই নিয়ে বড় দাবি তুলে ধরল রাজ্য সরকার।
চাকরি বাতিল মামলায় বড় দাবি রাজ্যের
ইটিভি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের আইনজীবী প্রাথমিক মামলার শুনানির ক্ষেত্রে বলেন, “২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীরা ২০১৬, ২০২০ ও ২০২২ সালের নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২০১৬ সালে নিযুক্ত ৩২ হাজার প্রার্থীর D.El.Ed প্রশিক্ষণ ছিল না। তবে পরে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়েছিলেন। একমাত্র ২০১৭ সালের পরে প্যানেলের বাইরে থেকে যারা নিযুক্ত হয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেই সংখ্যা ৩০০ জনের কাছাকাছি। কিন্তু ৩২ হাজার শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগে কোনও অস্বচ্ছতা নেই।”
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন রাজ্যের
প্রাথমিকের চাকরি বাতিল মামলায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এর আগে জানিয়েছিল যে, “আদালত যদি দুর্নীতি খুঁজে পায় তাহলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবে।” আর সেই ভিত্তিতেই এবার একের পর এক দাবি পেশ করল রাজ্য সরকারের আইনজীবী। এদিন আইনজীবী আরও বলেন যে, “ হাওড়া, হুগলি, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ এবং কোচবিহার-এই পাঁচটি জেলা থেকে বেছে বেছে ৩০ জন প্রার্থীকে অ্যাপটিটিউট টেস্ট দিয়েছিলেন কি না তা জানার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদীয়া থেকেও বেশ কিছু প্রার্থীকে ডাকা হলেও কোনও জেলার ক্ষেত্রেই যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়নি। তাই এক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।”
আরও পড়ুন: ‘ভুয়ো ভোটার পেলে নাম বাদ দেবই’, মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ BLO-র
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের টেটে উত্তীর্ণ হন রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। এরপর ২০১৬ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পর চাকরি দেওয়া হয় ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিয়োগ হয়নি বলে মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই সময়কার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলা উঠলে তিনি ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেন। কিন্তু এই রায় কোনওভাবেই মানতে চায়নি রাজ্য। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে তাই সোজা ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য। এরপর ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বাতিলের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। আর তখন থেকে হয়ে চলেছে শুনানি৷