‘প্রিয় দিদুন, মাকে ছাড়া খুব কষ্ট হয়!’ মমতাকে খোলা চিঠি ক্ষুদের! পড়ে চোখে জল সবার

Mamata Banerjee

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বয়স মাত্র পাঁচ, অথচ এই ছোটো বয়সে মাকে কাছে না পেয়ে বুকের ভিতর অভিমান এবং কষ্ট জমে আছে দিনের পর দিন। কারণ কর্মসূত্রে তাঁর মা উত্তর দিনাজপুরে প্রাথমিক শিক্ষিকা। তাই ইচ্ছে থাকলেও মাকে কাছে পায় না সে। তাই এবার মাকে সারাজীবন কাছে পেতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) খোলা চিঠি লিখল পাঁচ বছরের ঐতিহ্য দাশ। শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রিয় দিদুন’ বলেও চিঠিতে সম্বোধন করেছে সে, আর সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সকলে অবাক।

মাকে ছাড়াই বড় হচ্ছে ঐতিহ্য

ঐতিহ্য দাশের বয়স যখন মাত্র ২ বছর, তখন তার মা স্বাগতা পাইন উত্তর দিনাজপুরের রহমতপুর এফপি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি পান। বাধ্য হয়ে তাঁকে সেখানে থাকতে হয়। প্রথমে ঐতিহ্যকে স্বাগতাদেবী কর্মস্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে পারেনি ঐতিহ্য। অ্যাজমার সমস্যা আছে তার। তাই অগত্যা কয়েকমাস পরেই ঐতিহ্যকে আসানসোলে কর্মরত বাবার কাছে রেখে যান স্বাগতা। আসানসোলে দাদু ও বাবার কাছে থেকেই লেখাপড়া শুরু করে ঐতিহ্য। তার বাবা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মরত। যার ফলে মা ও ছেলের দূরত্ব কয়েকশো কিলোমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়।

মাকে কাছে পেয়ে খুশি ঐতিহ্য

ঐতিহ্য দাশের মা স্বাগতা পাইনের দাবি, ২০২১ সালের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে যাদের প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই কর্মরত রয়েছেন নিজের বাড়ি থেকে দূরবর্তী জেলায়। তাই নিজের জেলায় ফেরার আবেদন জানিয়েছেন সকলে। স্বাগতা পাইনের শ্বশুরবাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দপুরের বনকাটি গ্রামে। কিন্তু আবেদনে কোনও লাভ হয়নি। যার ফলে সবসময় মাকে কাছে পায় না ঐতিহ্য। কিন্তু যেহেতু বর্তমানে SSC-র ডিউটি পড়েছে তাই উত্তর দিনাজপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গে এসেছেন ঐতিহ্যের মা। তাইতো মাকে পেয়ে বেজায় খুশি ঐতিহ্য, মাকে কিছুকেই কাছছাড়া করতে রাজি নয় সে। তাইতো এই সমস্যা থেকে বাঁচতে স্রেফ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বসল এই ছোট্ট খুদে। যা দেখে হতবাক সকলে।

মুখ্যমন্ত্রীকে কী লিখল ঐতিহ্য

রিপোর্ট সূত্রে পাঁচ বছরের ছোট্ট খুদে নিজের ইচ্ছাতেই পেনসিল দিয়ে নিজের পড়ার খাতার কাগজে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখে ঐতিহ্য। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রিয় মমতা দিদুন’ বলে সম্বোধন করে চিঠিতে মাকে সবসময় কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা ফুটিয়ে তোলে সে। ঐতিহ্য লিখেছে, ‘উত্তর দিনাজপুরে আমার মা প্রাইমারি দিদিমণি। আমাদের ছেড়ে ওখানে থাকে। অনেক দিন পর পর বাড়ি আসে। আমি, বাবা আর দাদুর সঙ্গে বাড়িতে থাকি। আমার খুব কষ্ট হয় মাকে ছাড়া। তুমি তাড়াতাড়ি আমার মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। আর যেন আমাকে ছেড়ে না যায়।’ মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে আবার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার কথাও জানিয়েছে ঐতিহ্য। আর সেই চিঠি ভাইরাল হতেই সকলের নজর আকর্ষণ করেছে।

আরও পড়ুন: ‘নেপাল আমাদের দেশ নয়, কেউ যেন অশান্তিতে না জড়ায়!’ বার্তা মমতার

অবাক পরিবার

ছেলের এমন কাণ্ড দেখে পরিবারের সকলে অবাক তো বটেই তার সঙ্গে তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগছে এই ব্যাপারে চিঠি লেখা সে লিখল কীভাবে? ঐতিহ্যের বাবা মনে করছেন, বদলির জন্য অনেক দপ্তরে চিঠি লিখে আবেদন করা হয়েছিল ওর সামনে বসেই। হয়ত সেটা দেখেই অনুকরণের চেষ্টা করছে ছোট্ট ঐতিহ্য। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই চিঠি পৌঁছবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই তবে এই খুদে ঐতিহ্যের এইমুহুর্তে বদলি হতে চাওয়া শিক্ষকদের কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment