ফিক্সড ডিপোজিট ছাড়া বিনিয়োগের সেরা ১০ ঠিকানা, মিলবে ৯% এর বেশি সুদ

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ (Investment) বলতে ফিক্সড ডিপোজিটকেই বোঝে। তবে আপনার যদি মনে হয় যে, এখানে আর্থিক নিশ্চয়তা মিলছে না এবং মর্জি মতো সুদ পাচ্ছেন না, তাহলে কী করবেন? বিশেষ করে যখন মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ছে, তখন ফিক্সড ডিপোজিটর রিটার্ন প্রশ্নের মুখে দাঁড়াচ্ছে।

কিন্তু হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আজ আমরা ফিক্সড ডিপোজিট বাদ দিয়েও এমন কিছু নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প সম্পর্কে আলোচনা করব, যেগুলিতে বিনিয়োগ করলে এফডি’র থেকেও বেশি রিটার্ন পাবেন এবং টাকাও থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত।

স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্ট

বিনিয়োগ করতে চাইলে স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। কারণ এখানে সুরক্ষা এবং চড়া হারে সুদ, একসঙ্গে মিলবে। কিছু কিছু স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্ক প্রায় 8 শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে সেভিংস অ্যাকাউন্টে। আর এখানে এফডি’র মতো রিটার্ন পাওয়া যায়। পাশাপাশি 5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিপোজিট ইন্সুরেন্সের সুবিধা মেলে এবং যেকোনো সময় টাকা তোলার সুবিধাও পাওয়া যায়।

কর্পোরেট এফডি

কর্পোরেট ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার চমক দেবে। তবে এখানে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এগুলি ব্যাঙ্কের এফডি’র মতো অতটা সুরক্ষিত নয় এবং কোম্পানির অবস্থা অনুযায়ী কিছুটা রিক্স থাকে। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু কর্পোরেট কোম্পানি 9% পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে এবং পছন্দ মতো সময় সীমা বেছে নিতে পারেন।

পোস্ট অফিসের সঞ্চয় প্রকল্প

এখানে সরকারের নিশ্চয়তা এবং চড়া হারে সুদ, দুটোই মেলে। সবথেকে বড় ব্যাপার, পোস্ট অফিসে কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। এনসিএস, পিপিএফ’র মতো স্কিমগুলি এখানে সবথেকে নিরাপদ এবং লাভজনক। তবে হ্যাঁ, এখানে টাকা তোলার নিয়মে কিছুটা জটিলতা এবং ফিক্সড রিটার্নে সমস্যা দেখা যেতে পারে।

সোনা

সেই প্রাচীনকাল থেকেই সোনা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের মূল ভরসা হয়ে আসছে। সোনার বন্ড, ফিজিকাল গোল্ড, সবকিছুই বিনিয়োগের সেরা উপায়। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে সোনার দর দিনের পর দিন বৃদ্ধি পায়। ফলে সোনায় বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে মোটা অংকের টাকা পকেটে ঢুকবে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার, সহজে বিক্রিও করা যায় সোনা।

সরকারি বন্ড বা আরবিআই বন্ড

বিভিন্ন সরকারি বন্ড বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বন্ডে রিটার্ন কম হলেও নিরাপত্তা সবথেকে বেশি থাকে। কারণ, এখানে গ্যারান্টেড রিটার্ন পাওয়া যায় এবং সুদের হারে ছাড়ও মেলে। তবে হ্যাঁ, এই সমস্ত বন্ডে লক-ইন পিরিয়ড রয়েছে। অর্থাৎ, মেয়াদ পূর্তির আগে আপনি টাকা তুলতে পারবেন না।

P2P লেনদেন

P2P লেনদেন বলতে গেলে আপনি নিজেই ঋণদাতা হবেন এবং 15% পর্যন্ত রিটার্ন পাবেন। হ্যাঁ, উচ্চ রিটার্ন এবং প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ থাকছে এই পদ্ধতিতে। তবে হ্যাঁ, ঋণ গ্রহিতার ফাঁকি দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অ্যানুইটি স্কিম

বৃদ্ধ বয়সে যারা নিশ্চিত থাকতে চান এবং আর্থিক সুরক্ষা পেতে চান, তাদের জন্য এটি সেরা বিকল্প। কারণ এখানে 60 বছর বয়স হলেই নিশ্চিত মাসিক আয় পাওয়া যায়। এক কথায় গ্যারান্টেড ইনকাম এবং পেনশন বা রিটারমেন্ট ফান্ডের জন্য উপযুক্ত এটি। তবে হ্যাঁ, এখানে রিটার্ন অনেকটাই কম।

ডিভিডেন্ড-ইয়িল্ডিং স্টক

এগুলো শেয়ার বাজারের স্কিম। তবে এখানে নির্ভরযোগ্য আয় মেলে। পাশাপাশি আপনি পুঁজি বৃদ্ধির সুযোগও পাবেন। তবে এখানে কিছু অসুবিধা থেকে যাচ্ছে। প্রথমত, বাজারের ঝুঁকির উপর আপনার বিনিয়োগের মূলধন নির্ভর করবে এবং ডিভিডেন্ট খুব একটা গ্যারান্টেড নয়। তাই অবশ্যই বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এফবি এবং ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড

এগুলোতে বিনিয়োগে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং মোটা অংকের লাভও আসে। সবথেকে বড় ব্যাপার, এখানে প্রায় 20% হারে রিটার্ন মেলে এবং প্রধান মূলধন এফডি’তে রেখে সুদটুকু ইকুইটিতে লগ্নি করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, ইকুইটি ফান্ডের রিটার্ন অনিশ্চিত।

আরও পড়ুনঃ মাসে মিলবে ১০,০০০ টাকা পেনশন! অবসর জীবন হবে আরামদায়ক

সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান

এফডি’র থেকে চড়া হারে সুদ দেয় এই স্কিম। পাশাপাশি এখানে কর ছাড়ের সুবিধাও মেলে। নিয়মিত ইনকাম এবং মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে এটি হতে পারে সেরা বিকল্প। তবে হ্যাঁ, এখানে বাজারের ওঠানামার ওপর প্রভাব পড়ে এবং সাবধানে ফান্ড বেছে নিতে হয়।

Leave a Comment