প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পরেই গত কয়েকদিন আগেই বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করেন হুমায়ুন কবীর। সেই সময় বলেছিলেন যে খুব শীঘ্রই নতুন দল গঠন করবেন। এরপর পূর্বঘোষণা মতো আজ সোমবার নিজের দল ঘোষণা করলেন হুমায়ুন কবির (Humayun Kabir)। সাসপেন্ডেড বিধায়কের নয়া দলের নাম দিলেন ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’। শুধু তাই নয়, ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক আসনে প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেন হুমায়ুন। এবার ভরা মঞ্চে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তিনি।
নতুন দল গঠন হুমায়ুনের
হুমায়ুন কবির আগেই জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৯০টি আসনে জয়ী হওয়াই তাঁর লক্ষ্য। কারণ, তৃণমূল বা বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে, তারা কেউই হুমায়ুনকে মসজিদ গড়তে দেবে না। তাই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে অন্তত ৯০টি আসনে জেতাতে হবে তাঁর নতুন দলকে। আর সেই লক্ষ্যে এবার রাজনীতির ময়দানে নতুন দল গড়লেন হুমায়ুন। এমতাবস্থায় ভরা মঞ্চে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন হুমায়ুন। এমনকি বাদ গেল না কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর কথা।
মমতাকে চ্যালেঞ্জ হুমায়ুনের
দল ঘোষণার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে হুমায়ুন কবীর বলেন, “আপনি আমাকে গদ্দার বলছেন। অথচ রাতের অন্ধকারে মালদা থেকে এসে আমাকে সাসপেন্ড করার জন্য জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করলে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে কি না। তাঁরা বলেছিল, না।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন,“আজ আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, কোনও শক্তি থাকলে মুর্শিদাবাদের ২২টি আসনে খাতা খুলে দেখান। আপনার যদি সত্যি বলার সাহস থাকে, তাহলে আপনি নিজের প্রিয় চ্যানেলে একদিন আমার মুখোমুখি বসুন। বিজেপি হয়তো দু’-একটি আসন বাড়াতে পারে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোড়াফুলকে মুর্শিদাবাদে শূন্য করে দেব, জিরো করব।”
অধীর এবং শুভেন্দুকে তোপ হুমায়ুনের
সদ্য তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের মুখে শোনা গেল প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথাও। হুমায়ুন যে একসময় অধীরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তা রাজনৈতিক মহলের অজানা নয়। অধীরের হাত ধরেই যে হুমায়ুনের উত্থান, তেমনটাই বলেন অনেকে। এদিন নিজের দল ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’র ঘোষণা করার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধীর তথা কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ প্রকাশ্যে আনলেন। তিনি বলেন, “অধীরবাবুর বাড়ির লোকেরা আমাকে জাত তুলে অপমান করেছিল। আমি তখন বলেছিলাম, আমি এ কথা শুনতে রাজি নই। আমি নিঃস্বার্থে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। কোনও মিথ্যাচার করি না।” হুমায়ুনের আক্রমণের ক্রোধ থেকে বাদ যাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন,“সংখ্যালঘু বিধায়কদের জিতলে ছুঁড়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আপনাকে বলছি, আমি যদি ২০০টি আসনে প্রার্থী দিই, অন্তত ১০০টিতে জয় আসবে। রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন।”
আরও পড়ুন: মমতার নির্দেশেই কাজ, গঙ্গাসাগরে রাস্তা সংস্কারে জোর নবান্নর
অন্যদিকে এদিন দল ঘোষণার মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার, কুণাল ঘোষকে কড়া ভাষায় আক্রমণ হুমায়ুন কবির। তিনি জানিয়ে দেন, ‘আগামী জানুয়ারি মাসে ব্রিগেড ময়দানে সভা করে দেখাব। পারলে হুমায়ুন কবীরকে রুখে দেবেন। আর সভা ৩১ জানুয়ারির আগেই হবে।’ এদিন ফিরহাদ হাকিমকেও হুঁশিয়ারি দেন হুমায়ুনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ”যেদিন মাথা গরম হবে, এক লক্ষ মানুষ নিয়ে গিয়ে ফিরহাদের অফিস ঘেরাও করব।” অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্যালেন্ট আছে বলেও মন্তব্য করেন। যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিমকে ‘ক্রস মুসলিম’ বলেও আখ্যা দেন হুমায়ুন কবির। ভরতপুরের বিধায়ক বলেন, ফিরহাদ হাকিমের বাবা মুসলিম, মা হিন্দু। তাই উনি আধা মুসলিম, আধা হিন্দু। এছাড়াও কুণাল ঘোষের নাম বিকৃত করে ‘ছিনাল ঘোষ’ বলে জানুয়ারিতে ব্রিগেডে সভার ঘোষণা করেন তৃণমূল থেকে বিতাড়িত হুমায়ুন কবির।