সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ অমিতাভ বচ্চন… বলিউডের শহেনশাহ, বিগ বি, তাঁকে অনেকে অনেক নামে ডাকেন। নিজের ফিল্মি কেরিয়ারে তিনি এমন বহু সিনেমা করেছেন যা সাধারণ মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। তবে তাঁর করে যাওয়া সিনেমা ‘ত্রিশূল’ যে কারোর জীবনের বিশাল বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে সেটা হয়তো কেউ ভাবতেও পারেনি। আজকের এই আর্টিকেলে ব্যবসায়ী রাজা নায়েক (Raja Nayak Success Story), যিনি কিনা MCS লজিস্টিকস, অক্ষয় এন্টারপ্রাইজেস, জালা বেভারেজেস, পার্পল হেজ ওয়েলনেস স্পেস এবং নিউট্রি প্ল্যানেটের মালিক তাঁকে নিয়ে আলোচনা হবে। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘ত্রিশূল’ সিনেমা তাঁর জীবন বদলে রেখে দিয়েছে।
জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা
রাজা, যিনি একসময় শৈশবে ক্ষুধা, অভাব এবং চরম দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করেছিলেন, আজ তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসার মালিক। রাজা যদি শৈশবে তার বন্ধুর জেদে অমিতাভ বচ্চনের ত্রিশূল ছবি না দেখতেন, তাহলে তিনি বেঙ্গালুরুতে একটি দরিদ্র বাড়িতেই থেকে যেতেন। এই ছবিটি তাকে এমন কিছু করার জন্য এতটাই অনুপ্রাণিত করেছিল যে তিনি ১৭ বছর বয়সে ব্যবসায় প্রবেশ করার কথা ভাবেন এবং যেমন ভাবা তেমন কাজ।
প্রথম ব্যবসা ফুটপাতে জামাকাপড় বিক্রি
পুণে পালস-র রিপোর্ট অনুযায়ী, সংসার চালাতে তিনি ফুটপাতে শার্ট বিক্রি করে শুরু করেছিলেন। বছরের পর বছর কঠোর তপস্যা, জেদ, বারবার পড়ে যাওয়ার পরেও উঠে দাঁড়ানোর সাহস এবং দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন রাজাকে কোটিপতি করে তুলেছিল। রাজার গল্প ত্রিশূল ছবির নায়কের চেয়ে কম নয়, যেখানে সংগ্রামের প্রতিটি স্তরের পরে, একটি নতুন মোড় আসে এবং সেই ব্যক্তি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে। রাজা নায়েক বেঙ্গালুরুর এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি তার বাবা-মায়ের অসহায়ত্ব বুঝতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তাদের কাছে তাকে স্কুলে পাঠানোর মতো টাকাও নেই।
ফলস্বরূপ, মাঝপথেই পড়াশোনা, স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেন রাজা। এরপর ১৯৭৮ সালে অমিতাভ বচ্চনের ত্রিশূল ছবি দেখার পর তার জীবনের দিক পরিবর্তন হয়। সেই ছবিতে তিনি দেখেছিলেন কিভাবে একজন দরিদ্র মানুষ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হয়ে অনেক উচ্চতায় পৌঁছায়। থিয়েটারে কাটানো সেই তিন ঘন্টা তার ভেতরে একটা নতুন আগুন যেন জাগিয়ে তোলে।
১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়
বড় কিছু করার জন্য, রাজা নায়ক ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে মুম্বাই চলে যান। কিন্তু সাফল্য তার দরজা তৎক্ষণাৎ খুলে দেয়নি রাজার জন্য। তিনি ফিরে আসেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। তিনি সঠিক সুযোগের সন্ধান করতে থাকেন। বেঙ্গালুরুতে ফুটপাতে কিছু লোককে জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখেছিলেন। এরপর তিনি তার বন্ধু দীপকের সাথে এই ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেন। রাজার মা অল্প কিছু টাকা জমাতেন। মায়ের ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করে তারা তামিলনাড়ুর তিরুপুরে পৌঁছে সেখান থেকে ৫০ টাকায় সস্তা শার্ট কিনে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসেন। তারা নীল এবং সাদা রঙের সব শার্ট কিনে আনেন। এর পেছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল।
তাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটি কারখানা ছিল। এর কর্মীরা কেবল নীল এবং সাদা শার্ট পরতেন। তিনি তার বন্ধু দীপকের সাথে কারখানার গেটের বাইরে বসে একটি স্টল বসান। একদিনেই তারা সমস্ত শার্ট বিক্রি করে ৫,০০০ টাকা লাভ করেন। রাজা এখান থেকে বুঝতে পারেন যে কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক সুযোগের সমন্বয়ই প্রকৃত সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এরপর তিনি শার্টের সাথে জুতো এবং বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করেন। ব্যবসা শুরু হলে, তিনি প্রদর্শনীর স্টল স্থাপন করেন। শুধু তাই নয়, তিনি কোলহাপুরি চপ্পল এবং জুতোর ব্যবসাও শুরু করেন।
১৯৯১ সালে প্যাকেজিং ব্যবসায় পা রাখেন রাজা
রাজার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৯১ সালে। রাজা অক্ষয় এন্টারপ্রাইজেস শুরু করেন এবং প্যাকেজিং ব্যবসায় প্রবেশ করেন। ১৯৯৮ সালে, তিনি লজিস্টিকসে প্রবেশ করেন এবং MCS লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ একটি আন্তর্জাতিকভাবে সফল কোম্পানি। তার সম্প্রসারণ এখানেই থেমে থাকেনি। তিনি জালা বেভারেজেস নামে একটি পানীয় জল কোম্পানি শুরু করেন। এরপর বেঙ্গালুরুতে তিনটি বিউটি সেলুন এবং স্পা নিয়ে গঠিত একটি শৃঙ্খল ছিল যার নাম পার্পল হেজ এবং তারপরে নিউট্রি প্ল্যানেট প্রতিষ্ঠা করেন – একটি কোম্পানি যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে মিলিত হয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এনার্জি বার তৈরি করে।
রাজা নায়ক আজ একজন সফল শিল্পপতি। তার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। তিনি “কলনিকেতন এডুকেশনাল সোসাইটি” এর অধীনে স্কুল এবং কলেজ শুরু করেছিলেন যাতে একসময় তার মতো পরিস্থিতিতে থাকা শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি “দলিত ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (DICCI)” এর কর্ণাটক শাখার সভাপতিও ছিলেন। বর্তমানে, তিনি দলিত ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান।