বউবাজারের গৃহহীনদের জন্য বড় সুখবর! ২৬-এর পুজোর আগেই মিলবে নতুন বাড়ি

Firhad Hakim

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সময়টা ছিল ২০১৯, ওই বছর ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেল খননের সময় বউবাজার এলাকায় ব্যাপক ভূমিধস হয়। বহু পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ে এবং শতাধিক পরিবার এক লহমায় গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় থেকে এখনও গৃহহীন তাঁরা। তবে এবার তাঁদের নতুন বাড়ি নির্মাণের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। জানা গিয়েছে ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশেই ২০২৬ এর পুজোর আগেই এবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মুখে আনন্দ আহ্লাদের হাসি ফুটতে চলেছে।

উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ফিরহাদ হাকিমের

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় তিনটি নয়া মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন করছিলেন, সেই সময় বউবাজারের গৃহহীনরা নিজেদের বাসস্থান ফিরে পাওয়ার দাবিতে বউবাজারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় তাঁদের অবস্থান মঞ্চে গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বলা হয়েছিল শীঘ্রই বাড়ি তৈরি করা হবে গৃহহীনদের। এরপর গতকাল অর্থাৎ সোমবার কলকাতা পৌরনিগমে কেএমআরসিএল, পৌরনিগমের প্রতিনিধি এবং বউবাজারে বাড়িহারা বেশ কয়েকজনকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রী আধিকারিক

টিভি ৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ সোমবার কলকাতা পুরসভার সম্মেলন কক্ষে বউবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতিনিধি, চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে এবং কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী-সহ একাধিক আধিকারিক। বৈঠক শেষে মেয়র জানান, আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে এবং শীঘ্রই কলকাতা পুরসভার সঙ্গে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হবে। এর পরেই পুনর্বাসন প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রকাশ করা হবে।

নির্মাণকাজে ৩৩ কোটি খরচের ধাক্কা

বৈঠকে প্রথম দিকে বউবাজারে গৃহহীনদের নতুন বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড বা KMRCL বউবাজারে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য ২০২৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছিল। কিন্তু এই প্রস্তাবকে খারিজ করে দেয় ফিরহাদ হাকিম। তিনি নির্দেশ দেন ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বউবাজার এলাকায় বাড়ি তৈরি করে দিতেই হবে। ইতিমধ্যে KMRCL যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, সেই অনুযায়ী মেট্রোর কাজের জন্য বউবাজারে ২৪টির মধ্যে ২১টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ৩টি বাড়ি মেট্রোর কাজের জন্য ভেঙে ফেলা হয়। তার মধ্যে ১৬টি বাড়ি তিনতলা, ৫টি বাড়ি চারতলা। ৩টি বাড়ি দোতলা। ফ্ল্যাট বা আবাসন নয়, তৈরি করে দেওয়া হবে বাড়ি। সবমিলিয়ে খরচ হবে ২৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি বাড়ি সংস্কার করার ক্ষেত্রে খরচ হবে ৬ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: করতে পারেন না এ পাশ-ও পাশ! ৫ মাস ধরে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শয্যাশায়ী পার্থ চট্টোপাধ্যায়

মেয়রের বার্তা

এদিন বৈঠক শেষে বউবাজারের গৃহহীনদের উদ্দেশে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যে, “KMRCL প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই প্রাথমিক কাজ শেষ হয়ে যাবে এরপরেই নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তাই আর এক বছর নয়, আগামী ৯ মাসের মধ্যেই বউবাজারের বাস্তুহারা মানুষেরা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন।” এছাড়াও বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য তিন মাস অন্তর রিপোর্ট দেওয়া হবে। পূর্ত ও জল সরবরাহ সংক্রান্ত পরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন করা হবে কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের আওতায় আগামী ১০ বছর ধরে সেই বাড়িগুলির গুণগত মান ও স্থায়িত্ব পর্যবেক্ষণ করা হবে। এখন দেখার এই গৃহীত পরিকল্পনা আদতে কতটা বাস্তবায়িত হবে।

Leave a Comment