সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এবার বাঙালিদের উপর আক্রমণের অভিযোগ বিজেপি শাসিত রাজ্য ওড়িশায় (Odisha Violence)। বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে বাংলাদেশি সন্দেহে বাঙালি গ্রামে অগ্নি সংযোগের অভিযোগ। ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় ১০০০ জন। পাশাপাশি কমপক্ষে ১৫০ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আদিবাসী বনাম বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত পৌঁছেছে চরমে। এক নিখোঁজ মহিলার গলাকাটা দেহ উদ্ধার হওয়াতেই ছড়ায় এই অশান্তি।
এএনআই সূত্রে খবর, ওড়িশার মালকানগিরি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। শুধু বাঙালিদের ঘরবাড়ি পোড়ানো নয়, বরং অনেক গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ২৪ ঘন্টার জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। দু’টি গ্রামে পরিস্থিতি এখন থমথম। গোটা এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীও নামানো হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।
কী নিয়ে এই ঘটনা?
আইএএনএস সূত্রে জানা হচ্ছে, রাখালগুড়া গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক মহিলা সম্প্রতি নিখোঁজ হয়েছিলেন। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর নদীর ধার থেকে ওই ৫১ বছর বয়সী মহিলার গলাকাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। জমি নিয়ে বিবাদ থেকেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আর সেই ঘটনায় শুভরঞ্জন মন্ডল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে এরপরই বাংলাভাষীদের উপর হামলা চালানো হয়। তির, ধনুক, বর্শা, কুড়ুল নিয়ে বাংলাভাষীদের গ্রামে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। এমনকি ১৫০-র বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫০০০ লোকজন মিলেই এই তান্ডব চালিয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন মুখ খোলেনি। ভয়তে বহু মানুষ গ্রাম ছেড়েও পালিয়েছে।
Bhubaneswar, Odisha | Internet services have been temporarily suspended in Malkangiri district following a law-and-order situation. pic.twitter.com/TV7ISRRBgc
— ANI (@ANI) December 9, 2025
এদিকে বাংলাভাষীরা দাবি করছে, পরিকল্পিতভাবেই তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছে তারা। এমনকি জেলা শাসকের দপ্তরের বাইরেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে অনেকে। সবথেকে বড় ব্যাপার, অশান্তি বাধানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের বক্তব্য, কামওয়াড়া পঞ্চায়েতে এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলাম। তাণ্ডবকারীদেরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। নাহলে এই জায়গা রণক্ষেত্রে পরিণত হবে।
আরও পড়ুন: JEE, NEET-র ট্রেনিংয়ের সাথে মাসে মিলবে স্টাইপেন্ড! দারুণ প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের
এদিকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তি বজায় রাখার জন্য এবং গুজব আটকানোর জন্য গোটা এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কমিউনিটি কিচেন খোলা হয়েছে, এমনকি অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সর্বত্র চেষ্টা করছি। ক্ষয়ক্ষতের পরিমাণ হিসাব করা হচ্ছে। আর যে মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাঁর মুণ্ডু এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। তারও খোঁজ চলছে। একাধিক জায়গায় ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।