বাংলাদেশের থেকেও খারাপ, ১১ মাসে ৪.৩% পতন ভারতীয় রুপির! কী কারণে বেহাল দশা?

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দিনের পর দিন যেন ভারতীয় রুপি (Indian Rupee) লজ্জার রেকর্ড গড়ছে। বিগত ১১ মাসের মধ্যে সবথেকে বড় পতন রুপির। এবার বাংলাদেশের থেকেও বেহাল অবস্থা ভারতীয় মুদ্রার! জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে রুপির মূল্য পতন হয়েছে প্রায় ৪.৩ শতাংশ। এশিয়ার সবথেকে খারাপ পারফরমেন্স করা মুদ্রার তকমা গেল এবার ভারতীয় রুপির মাথায়। সবথেকে বড় ব্যাপার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হলে এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পরিসংখ্যান কী বলছে?

বলাবাহুল্য, ২৭ নভেম্বর ১ ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ৮৯.২৭ রুপি। এরকম পতন ইতিহাসে কখনো হয়নি। এমনকি এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে ছাড়েনি দেশের বিরোধী দল কংগ্রেস। বর্তমানে এশিয়ার মুদ্রাগুলির মধ্যে ডলারের সামনে দিনের পর দিন শক্তিশালী হচ্ছে মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত, তাইওয়ানের ডলার, থাইল্যান্ডের ভাট এবং চিনের ইউয়ান। অন্যদিকে ভারতের অবস্থা দিনের পর দিন বেহাল। সবথেকে বড় ব্যাপার, এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশও ভালো পারফরমেন্স করছে।

কী কারণে এতটা পতন ভারতীয় মুদ্রার?

আসলে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার এই পতনের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে। তার মধ্যে সবথেকে বড় কারণ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্কনীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছে, এবছরের এপ্রিল থেকে শুরু করে দু’টি ধাপে ভারতের উপর যে মোট ৫০% শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্পের, তার কারণেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের সংঘাত বাঁধে। আর এটিই রুপির মান তলানিতে ঠেকছে। কারণ, ভারতের ব্যবসায়ীদের পক্ষে দিনের পর দিন সময় আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেকটাই তলানিতে ঠেকছে।

যদিও বর্তমানে আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিকল্প রাস্তা খোঁজার পথে ভারত। তবে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে গেলেও প্রয়োজন মার্কিন ডলারের। কারণ, আন্তর্জাতিক লেনদেনের মধ্যে ৮৫ শতাংশই ডলারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখতে ডলার এবং সোনা কেনার পরিমাণ বাড়াচ্ছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাই বাজারের চাহিদা বাড়ায় রুপির মান দিনের পর দিন তলানিতে ঠেকছে এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে আপনাদের যদি একটি পরিসংখ্যান বলি তাহলে হয়তো চমকে উঠবেন। পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে জানা গেল, ১৯৪৭ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার বছরে ১ ডলারের দাম ছিল মাত্র ৩.৩ রুপি। তারপর থেকে নয়াদিল্লি যত মার্কিন মুদ্রা কিনেছে ততই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রার দাম নিচে নেমেছে। অন্যদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ডলারের দাম। উদাহরণ হিসাবে, এখন ভারতীয় মুদ্রায় ৮৯ টাকা ১ ডলারের দাম। তবে যখন তা ১০০ টাকায় নেমে যাবে, মার্কিন বাজারে এক ডলারের থেকে বেশি পরিমাণ পণ্য কেনার সুযোগ পাবে সেখানকার বাসিন্দারা। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে ভারতের পণ্য সেখানে জলের দরে বিকোবে।

শেয়ার বাজারে চমক

উল্লেখ্য, ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দাম দিনের পর দিন কমার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন এই দেশের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। আর এর ফলে চাঙ্গা হচ্ছে সেনসেক্স এবং নিফটি। নভেম্বরে সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছেছিল বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার সূচক। আর রুপির দাম আরও পড়ার কারণে সূচক আরও উপরের দিকে উঠতে পারে বলেই আশাবাদী ওয়াকিবহাল মহল। এখন দেখার, ভারতীয় মুদ্রার দাম ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

Leave a Comment