সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আবারও অস্থিরতার ছায়া। সম্প্রতি প্রতিবেশী বাংলাদেশের একের পর এক হিংসা আর সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবর সামনে আসছে। আর ঠিক সেই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিল ভারতীয় নৌবাহিনী। সম্প্রতি নৌবাহিনীর তরফ থেকে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আকাশ ও সমুদ্র এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ NOTAM জারি করা হয়েছে (Indian Navy NOTAM)। সেই অনুযায়ী, আগামী ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর এই দুই দিন বিশেষ সামরিক মহড়া বা কার্যকলাপ চলতে পারে। যার সঙ্গে ৬৮০ কিলোমিটার পাল্লার এক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত রয়েছে।
কী এই নোটিশ আর কেনই বা গুরুত্বপূর্ণ?
জানিয়ে রাখি, এই NOTAM এমন সময় জারি করা হয়, যখন কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বিমান চলাচল বা নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকতে পারে। আর সাধারণত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, সামরিক মহড়া বা অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক কার্যকলাপের আগে এরকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে যে ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভাব্য পাল্লা ৪৭০ কিলোমিটার থেকে ৬৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়াতে পারে। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিমান বা জাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা নৌবাহিনী এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের নাম প্রকাশ করেনি। তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছে যে, এটি সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য কোনও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে। অথবা K-4 কিংবা অগ্নি সিরিজের কোনও উন্নত সংস্করণ হতে পারে। বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগেও এরকম কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হয়েছে।
কোথা থেকে উৎক্ষেপণ হবে?
বেশ কয়েকটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হতে পারে বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছাকাছি কোনও এলাকা থেকেই। আর সেখান থেকে তা বঙ্গোপসাগরের গভীর অঞ্চলে গিয়ে পড়তে পারে। সেই কারণেই সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় ঘটে হৃদয়বিদারক ঘটনা। ধর্ম অবমাননার সন্দেহে ৩০ বছরের এক হিন্দু শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, দিপু একজন গার্মেন্টস কারখানার কর্মী ছিলেন এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আর এই ঘটনায় গোটা উপমহাদেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, এমনকি সাংবাদিকদের উপর চাপও সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরের শুরুতেই একগাদা ট্রেন বাতিল, তালিকা দিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই NOTAM জারি হওয়ার খবর ঘিরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বহু মানুষ একে ভারতের পক্ষ থেকে কঠোর কৌশলগত বার্তা হিসেবে মনে করছে। এমনকি তারা বলছেন যে, ভারত পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। আর আঞ্চলিক অস্থিরতা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে কোনওরকম গাফিলতি নেই এবং পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে।
সবথেকে বড় ব্যাপার, এই নোটিশ এমন সময় জারি করা হয়েছে যখন চিন ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। হ্যাঁ, বেজিংয়ের ইতিমধ্যেই জিবুতি, পাকিস্তানের গোয়াদর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার বন্দরগুলিতে প্রবেশাধিকার রয়েছে। আর ২০২২ সালে ১০ থেকে ১১ নভেম্বর ভারত একটি পরীক্ষার জন্য নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছিল। তবে চিনা গবেষণা জাহাজ ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। যদিও এবারের এই সামরিক উৎক্ষেপণ কতটা প্রভাব বিস্তার করে সেটাই দেখার।