প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এসএসসির ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর ফের আদালত ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা জিটিএ- এর নিয়োগ করা ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্টর বিচারপতি। আর এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফুঁসছে পাহাড়। এবার তারই প্রতিবাদে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের সমস্ত বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার (Schools Closed In Darjeeling) সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সংগঠন। মাথায় হাত পাহাড়ি পড়ুয়াদের।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধের ডাক স্কুলগুলিতে
জিটিএ-র নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বেনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে যে প্রমাণ সামনে আসে, তার ভিত্তিতেই বুধবার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। সরাসরি বাতিল হয়ে গিয়েছে ৩১৩ জনের নাম। এমতাবস্থায় কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের খবর পাহাড়ে পৌঁছতেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা চারিদিকে, তাই এবার দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে জিটিএ-র অধীন প্রতিটি সরকারি স্কুলে অনির্দিষ্টকালের বনধের ডাক দিল সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন। এমনকিযে সব স্কুলে পরীক্ষা চলছিল বা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল, সেগুলিও বন্ধ রাখা হচ্ছে।
কেন এই বনধের ডাক?
শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ খাড়কা বলেন, “দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের জিটিএ-র অধীন সমস্ত স্কুল বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। যেসব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, ফলাফল ঘোষণা হতে চলেছে সেটাও স্থগিত থাকবে। কোনও স্কুল সংগঠনের আহ্বান উপেক্ষা করলে যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সংগঠন তার দায় নেবে না।” তিনি আরও জানান, “কলকাতা হাই কোর্টের রায় এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা দার্জিলিং পাহাড়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্য শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। এটা চলতে পারে না। তাই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।” জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেন, “আমি কাউকে হতাশ হতে দেব না। ওই শিক্ষকদের ন্যায়বিচারের জন্য যেখানে যেতে হবে যাব।”
আরও পড়ুন: বাজেটে ৪৭২ কোটি থেকে বেড়ে ৫,৬০২ কোটি! সংখ্যালঘু অধিকার দিবসে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
উল্লেখ্য, পাহাড়ে জিটিএ নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে থাকা স্কুলগুলিতে বেআইনিভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানিতে প্রাথমিক পর্যায়ে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায়কেই বহাল রাখে। অর্থাৎ সিআইডি তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখে আদালত। এমনকি এই সংক্রান্ত মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্তও। যদিও পরবর্তী সময়ে এই মামলা ফের ফিরে আসে কলকাতা হাইকোর্টে। এবার ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি এবং CID তদন্ত চলবে বলেও জানান আদালত।