বাংলার প্রায় ১ কোটি কর্মী পাচ্ছেন না PF-র টাকা! উঠল বঞ্চনার অভিযোগ

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: মুখেই সামাজিক সুরক্ষা! কাজে কি শুধুই বঞ্চনা? পশ্চিমবঙ্গে কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনে নথিভূক্ত সংস্থাগুলির 70 শতাংশ কর্মীর প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে না প্রাপ্য অর্থ। সদ্য কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য। আসলে এরাজ্যের কর্মীরা যে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার, তা মেনে না নিলেও খোদ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে কিন্তু পুরোপুরি স্পষ্ট।

বর্তমান পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলির অন্তত 1 কোটি যোগ্য কর্মী এই সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত! আর তাতেই প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের গোটা চিত্র।

যোগ্য হয়েও সুবিধা পাচ্ছেন না রাজ্যের কর্মীরা!

সাধারণত নিয়ম অনুযায়ী, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠন বা EPFO-এর আওতাভুক্ত বিভিন্ন সংস্থাগুলির যে সকল কর্মীরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অধীনে, তাদের প্রতি মাসের মাইনে থেকে নির্ধারিত অর্থ কেটে নেয় PF দপ্তর।

এরপর কর্মীদের সংশ্লিষ্ট সংস্থা সেই সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকে। তবে গত আর্থিক বছর অর্থাৎ 2024-25 বর্ষের 31 মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলির প্রায় 1 কোটি কর্মীই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

বলা বাহুল্য, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে কর্মচারী ভবিষ্যৎনিধি সংগঠনের মোট 10টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। যার আওতায় রয়েছে শহরের কমপক্ষে 1 লক্ষ 46 হাজার বেসরকারি সংস্থা। আর সেই সূত্র ধরেই, ওই সংস্থাগুলিতে কর্মরত 1 কোটি 39 লক্ষ বা তার বেশি কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পাওয়ার জন্য পুরোপুরি যোগ্য। তবে দুঃখের বিষয়, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মাত্র 55 হাজার সংস্থা তাদের কর্মীদের টাকা জমা করেছে EPFO-তে।

হ্যাঁ, গত 31 মার্চ পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী, 55 হাজার সংস্থার টাকা জমা দেওয়ার সুবাদে 39 লক্ষ 52 হাজার কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু বাকিদের কী হবে? রিপোর্ট বলছে, অন্তত 1 কোটি কর্মচারী অর্থাৎ 70 শতাংশের বেশি কর্মীর PF অ্যাকাউন্টে প্রাপ্য অর্থ জমা দেয়নি দপ্তর। আরে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ভেসে উঠেছে কেন্দ্রের সামাজিক সুরক্ষার আসল রূপ!

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এমন দুরবস্থার মাঝে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার্ক স্ট্রিট দপ্তরের। অর্থাৎ 10টি আঞ্চলিক EPFO অফিসের মধ্যে এই দপ্তরের অবস্থা সবচেয়ে বেহাল। ওই অফিসটিতে নথিভূক্ত অবস্থায় থাকা কর্মীদের মাত্র 19 শতাংশের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট মূল্য জমা পড়ে। কম-বেশি হলেও গোটা রাজ্যের ছবিটা প্রায় একই।

অবশ্যই পড়ুন: AI বদলে দিল NHAI-র ভাবমূর্তি! ২৫,৬৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হল সরকারের

প্রসঙ্গত, কেন প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজ্যের কর্মীদের? ঠিক কোন কারণে 70 শতাংশের বেশি কর্মী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন? এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তরে PF দপ্তরের কর্মীরা দাবি করেছেন, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয় বরং গোটা দেশেই চিত্রটা এক। তাহলে কি ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করা হচ্ছে কর্মীদের সাথে?

বেসরকারি সংস্থাগুলি ইচ্ছে করে এমন কাজ করছে কিনা তা পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও, বিষয়টিকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রভিডেন্ট ফান্ড দপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ঘটনা না ঘটতো, তবে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা না করার হার 70 শতাংশ ছাড়িয়ে যেত না। সব মিলিয়ে, রাজ্যের বেশিরভাগ কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আপাতত দোলাচলের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন।

Leave a Comment