বাধ্য হয়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ হচ্ছে এই তিন দশক ধরে চলা কোর্স

Jadavpur University

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে পড়ুয়ার সংখ্যা! এবার তাই বাধ্য হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) বন্ধ হতে চলেছে তিন দশকের পুরনো পাঠ্যক্রম। ১৯৮৯ সালে চালু হাওয়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল সকলের যাচ্ছে কিন্তু বর্তমানে শিক্ষানীতি পরিবর্তন হওয়ায় ভর্তির ছবিটা পরিবর্তন হয়েছে। তাই এবার কোর্সটি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

কমছে আবেদনের সংখ্যা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, গত ৩ ডিসেম্বর ভর্তির আবেদন গ্রহণের শেষ দিন ছিল। কিন্তু তাতেই ফুটে উঠল অন্য চিত্র। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৬০টি। যদিও এর আগের শিক্ষাবর্ষেও আবেদনের সংখ্যা কম ছিল। বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন-এ পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৮০-র বেশি। কিন্তু ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৫২ জন পড়ুয়া। ক্রমশ কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। তাই এবার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন পাঠ্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ১৯৮৯ সালে চালু হয়েছিল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন মাস কমিউনিকেশন। এটি এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স। ইন্টারডিসিপ্লিনারি স্টাডিজ, ল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইএসএলএম) ফ্যাকাল্টির অধীন অ্যাডাল্ট অ্যান্ড কন্টিনিউইং এডুকেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন বিভাগের স্কুল অব মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড কালচার এই কোর্সটি পরিচালনা করে। এই এক বছরের এই পাঠ্যক্রমে মোট দশটি পত্র পড়ানো হত। বিভাগের শিক্ষকেরা ছাড়াও ৬ জন অতিথি শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু পড়ুয়াদের সংখ্যা কমতে থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল।

কেন কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা?

কোর্সটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সুবীর ঘোষের মতে, সমস্যার গোড়ায় রয়েছে পাঠক্রমের চরিত্রেই। তিনি জানিয়েছেন, “সাংবাদিকতা বই মুখস্থের বিষয় নয়। এর ব্যবহারিক দিকটাই আসল। অন্তত ৫০ শতাংশ প্র্যাকটিক্যাল না থাকলে চলবে না। ডিজিটাল টুল, নতুন প্রযুক্তি—সব শিখতে হবে। আর যাঁরা পড়াবেন, তাঁদের মধ্যে পেশাদার সাংবাদিক বেশি থাকলে পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন। হয়তো সেই জায়গাতেই ঘাটতি রয়ে গিয়েছে।” এছাড়াও জানানো হয়েছে যখন এই পাঠ্যক্রম চালু হয়েছিল তখন গণজ্ঞাপন বিষয়ে মাস্টার্স ইন আর্টস ছিল না। কিন্তু সেটি চালু হওয়ায় গত কয়েক বছরে পড়ুয়ারা সে দিকেই ঝুঁকেছেন। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন করে সময় নষ্ট করে এই সমস্ত পাঠ্যক্রমগুলিতে আর ভর্তি হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: MI-এ খেলা ইংল্যান্ডের দুর্ধর্ষ তারকা বোলারকে কিনতে পারে KKR

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স কো-অর্ডিনেটর শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের ফ্যাকাল্টির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। কারণ ডিপ্লোমা কোর্সের চাহিদা নিম্নমুখী। পরবর্তীকালে সময়কাল কমিয়ে আধুনিক করে নতুন মোড়কে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।” অন্যদিকে গত কয়েক বছরে সাংবাদিকতা বিভাগ নিয়ে একাধিক বিতর্কে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। খাতা না দেখেই নম্বর দেওয়ার অভিযোগ যেমন উঠেছিল ঠিক তেমনই ফাইনাল মার্কশিট পেতে পড়ুয়াদের দীর্ঘ ভোগান্তি, সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই জানা গিয়েছে, এ বছর যাঁরা আবেদন করে ফেলেছিলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয় তরফে।

Leave a Comment