বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: এবার বক্সিংয়ে উজ্জ্বল হল বাংলার মুখ। আন্তঃরাজ্য বক্সিং প্রতিযোগিতায় কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাংলা তথা নিজ জেলা পুরুলিয়ার নাম উজ্জ্বল করলেন চিরঞ্জিত বাউরি (Chiranjit Bauri Wins Gold)। সম্প্রতি রাঁচির বিরসা মুন্ডা অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে গড়িয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলার পাশাপাশি সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল দিল্লি, বিহার, ঝাড়খন্ড, হরিয়ানা এমনকি ওড়িশার প্রতিযোগীরাও। আর সেই আসরেই নিজের হাতের জাদু দেখিয়ে সোনা জিতলেন পুরুলিয়ার ছেলে চিরঞ্জিত।
টালির চালেই স্বপ্ন দেখা শুরু চিরঞ্জিতের
News 18 এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলার গর্ব চিরঞ্জিতের বাড়ি পুরুলিয়ার আদ্রা রেলশহরের জ্যোতিমোড় এলাকায়। বাবার মৃত্যুর পর সেখানেই এক টালির ছাউনির নিচে মায়ের সাথে কষ্টেশিষ্ঠে দিন কাটান চিরঞ্জিত। চরম অভাবের মধ্যে যেটুকু যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। জানা গিয়েছে, 2016 সালে চিরঞ্জিতের বাবা পরলোক গমন করলে সংসারের চাপে এবং অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবার মৃত্যুর পর মাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার সামলাতে একেবারে হিমশিম খেতে হচ্ছিল চিরঞ্জিতকে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। লেখাপড়া ছাড়লেও জীবনের অঙ্গ বানিয়ে নিয়েছিলেন বক্সিংকে। সেই থেকেই পাশের এক ক্লাবে নিয়মিত বক্সিং অনুশীলন করতেন চিরঞ্জিত। নিজের মধ্যে কিছু করে দেখানোর খিদে এবং অদম্য জেদ নিয়েই বক্সিংয়ের পেছনে আদা জল খেয়ে লেগেছিলেন পুরুলিয়ার এই কৃতি। আর তাতেই এসেছে সাফল্য।
অবশ্যই পড়ুন: দীর্ঘ কেরিয়ারে নিয়েছেন ৯৯১টি উইকেট, নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হলেন জেমস অ্যান্ডারসন
তবে, সফলতা ছোঁয়ার আগে কার্যত দাঁত দিয়ে পাথর ভাঙতে হয়েছিল চিরঞ্জিতকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পরিবার সহ বক্সিংয়ের খরচ জোগাড় করতে কখনও দিনমজুর, কখনও আবার অন্যদেরকে বক্সিং শিখিয়ে আয় করেছেন তিনি। দারিদ্রতার একেবারে শেষ সীমায় পৌঁছেও সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পুরুলিয়ার ছেলে। যদিও বর্তমানে পুরুলিয়ার আদ্রায় এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন চিরঞ্জিত। বক্সিং তাঁর ভালবাসা। সেটা নিয়েই বেঁচে থাকতে চান এই বঙ্গ তরুণ।
চিরঞ্জিতের স্বপ্ন একদিন ভারতের হয়ে খেলবেন। যদিও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের হয়ে খেলাটা মুখের কথা নয়। এখনই সংসারের খরচ চালিয়ে বক্সিংয়ের সরঞ্জামের খরচ টানতে পারছেন না তিনি। তারপরে নিজের হাত খরচ তো রয়েছেই। তাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিরঞ্জিত জানান, ‘সংসারের খরচ চালানোর পরে বক্সিংয়ের জন্য কিছু বেঁচে থাকে না। তাই সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে একদিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারবেন তিনি।’ পুরুলিয়ার বক্সারের কথায়, ‘সরকার যদি তাঁর কঠিন সময় পাশে থাকে, তবে আগামী দিনে ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন তিনি।’