প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সামনেই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের জরুরী প্রস্তুতিতে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলি। এমতাবস্থায় ফের খবরের শিরোনামে উঠল ওয়াকফ আইন। বিতর্কের প্যাঁচে পড়ে এবার আইন মানতে বাধ্য হল নবান্ন(Nabanna)। SIR আবহে একেবারে ডেডলাইনের মুখে এসে ওয়াকফ সম্পত্তির খতিয়ান কেন্দ্রীয় পোর্টালে আপলোডের নির্দেশ দিল নবান্ন। যার জেরে জেলাস্তরে পড়ে গেল হুড়োহুড়ি।
ওয়াকফ সম্পত্তির খতিয়ান নিয়ে বসল নবান্ন
উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল একটি জৈন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বাংলায় ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কার্যকর হতে দেব না। মুসলমানদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ আমি চলতে দেব না।” এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেছিলেন যে, “আমাদের এখানে ৩৩ শতাংশ মুসলিম আছেন। তাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানে থাকছেন। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া আমার কর্তব্য।” কিন্তু শেষপর্যন্ত উর্মিদ পোর্টালে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করণের ক্ষেত্রে সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় তাই আইন মানতে বাধ্য হল নবান্ন। সকল জেলাশাসকদের উদ্দেশে এবার ওয়াকফ সম্পত্তির খতিয়ান কেন্দ্রীয় পোর্টালে আপলোডের নির্দেশ দিল প্রশাসন।
বিশেষ নির্দেশ নবান্নের
সূত্রের খবর, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বেলায় জেলা শাসকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের সচিব ডঃ পি. বি. সালিম। সেখানে নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী জানা গিয়েছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ‘umeedminority.gov.in’ পোর্টালে রাজ্যের জেলা ধরে ধরে ওয়াকফ সম্পত্তির খতিয়ান বা তথ্য আপলোড করতে হবে। জানা গিয়েছে বাংলায় ৮২ হাজারের বেশি ওয়াক্ফ সম্পত্তি রয়েছে। যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে। চলতি বছর গত ৮ এপ্রিল থেকে ওয়াকফ সংশোধন আইন বাস্তবায়িত হয়েছে। আইনটির থ্রি বি ধারায় বলা হয়েছে যে দেশের সব নিবন্ধিত ওয়াকফ সম্পত্তির তথ্য আগামী ৬ মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় পোর্টালে আপলোড করতে হবে।

আট দফা কর্মসূচির নির্দেশ নবান্নের
নির্দেশ অনুযায়ী সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের সচিব রাজ্যের জেলাশাসকদের আট দফা কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছেন। এক, মুতাওয়াল্লি, ইমাম, মোয়াজ্জিন ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের আপলোড প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে হবে। জেলা স্তরে মুতাওয়াল্লিদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পোর্টালে তথ্য আপলোডের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দুই, যেসব এস্টেট ‘Enrolled’ সেখানকার অ-বিতর্কিত সম্পত্তিই রেজিস্টার এবং আপলোড করতে হবে। তিন, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা যুক্ত কর্মী নিয়ে Facilitation Centre খুলতে হবে। চার, সংখ্যালঘু দফতরের সিনিয়র অফিসারদের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে পরিদর্শনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুজোয় ১২ দিন ছুটি, নষ্ট ৮টি হলিডে! ২০২৬-র ছুটির তালিকা প্রকাশ করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্নের তরফে পাঠানো চিঠিতে পাঁচ নম্বর নির্দেশে বলা হয়েছে, কাজটির জন্য নির্দিষ্টভাবে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং প্রতিদিনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ছয়, এই দফতরের অধীনে রাজ্য-স্তরের অফিসগুলোর সিনিয়র অফিসারদের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সাত, আটটি জেলায় ইতিমধ্যেই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলোও একইভাবে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করতে পারে। আট, প্রতিদিন দুপুর ২ টো থেকে ৪ টে পর্যন্ত ভিসি মোডে স্টেট ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যেখানে রাজ্যের সব অফিস অংশগ্রহণ করতে হবে।