বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ভারত নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চিনকেই বেছে নিল বাংলাদেশ। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহু আলোচিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথম পর্যায়ে খরচ ধার্য করা হয়েছে 9 হাজার 150 কোটি টাকা। আর এই বিপুল অর্থের মধ্যে প্রথম ধাপে চিনের কাছে 6 হাজার 700 কোটি টাকা দাবি করে বেইজিংকে চিঠি দিয়েছে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর তাতেই এবার উদ্বেগ বাড়ল ভারতের।
তিস্তা মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য
ভারতের সাথে তিস্তার জল বন্টন নিয়ে কোনও নতুন চুক্তি না হওয়ায় সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানীয় জল সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই তিস্তা মহা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই তিস্তা পরিকল্পনার প্রাথমিক লক্ষ্য, বর্ষার সময় এই প্রস্তাবিত তিস্তা জলাধারে জল ধরে রেখে তা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগানো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের চিকেন নেক ঘেঁষে বাংলাদেশের এই তিস্তা মহা পরিকল্পনায় ড্রাগনের অন্তর্ভুক্তি নয়া দিল্লির জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। মনে করা হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে উত্তরবঙ্গ ভারত সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের এই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেখানে চিনাদের উপস্থিতি ভারতের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আপাতত যা খবর, এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে বাংলাদেশের উত্তরভাগের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, রাজশাহী সহ বিভিন্ন জেলার মধ্যে দিয়ে।
বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প হাতছাড়া হল ভারতের
বাংলাদেশের তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত এবং চিনের মধ্যে চলছিল ঠান্ডা লড়াই। আসলে শেষ পর্যন্ত কোন দেশ বাংলাদেশের এই বৃহৎ পরিকল্পনার দায়িত্ব নেবে তা নিয়েই প্রশ্ন ছিল ওপার বাংলার বাসিন্দাদের। যদিও একটা সময় গিয়ে ভারত এবং জাপান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের এই তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বলেও শোনা যায়।
আর তারপরেই বদলে গেল গোটা চিত্র। শেখ হাসিনার পতনের আগে পর্যন্ত তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব কার্যত ভারতের হাতে উঠবে উঠবে করছিল.. কেননা, গত বছর হাসিনা সরকারের পতনের আগে চিন সফর শেষ করে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু মুজিব কন্যা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের এই তিস্তা পরিকল্পনা ভারত বাস্তবায়ন করুক। সেই মতোই ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশ সফর করার কথা ছিল।
অবশ্যই পড়ুন: এখনই জাতীয় শিবিরে যাবে না কোনও ফুটবলার! বড় সিদ্ধান্ত ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের
তবে হাসিনার পতনের পর ইউনূস শাসন শুরু হতেই একদিকে উপকারী ভারতের সাথে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে বাংলাদেশের, অন্যদিকে আরও কাছাকাছি এসেছে চিন। মূলত সে কারণে, বিগত দিনগুলিতে ড্রাগনের সাথে নানান কৌশলে ভারতকে ধাক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী। এবার সেই মতোই, নিজ সিদ্ধান্তে ভারতের বদলে তিস্তা পরিকল্পনা চিনকেই শপে দিতে চাইছেন ইউনূস।
যদিও ওপার বাংলার বহু বিশেষজ্ঞের দাবি, তিস্তা মহা পরিকল্পনা নিয়ে চিনকে দায়িত্ব দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির হাত। হ্যাঁ, মনে করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই তিস্তা পরিকল্পনা ড্রাগনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন ইউনূস। সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ থেকে চিন সফরে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আর তারপরই ভারতকে টপকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চিনের সাথে হাত মেলাতে চলল বাংলাদেশ…