সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দেশের শহরগুলিতে জনসংখ্যা এবং যানবাহন দিনের পর দিন বাড়ছে। সেই কারণে ট্রাফিক সিগন্যাল মাঝে মাঝে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিগন্যালের লাল-সবুজ-হলুদ লাইটের অপেক্ষা, সারাদিনের যানজট আর বাড়তি জ্বালানির খরচ, সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে শহরে যাতায়াতের ব্যবস্থার গতি কমাচ্ছে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে রাজস্থানের কোটা শহর এবার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পথে হাঁটল। চলতি মাসেই কোটা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ ‘ট্রাফিক সিগন্যাল-ফ্রি সিটি’ (Traffic Signal Free City) হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
কীভাবে ‘ট্রাফিক সিগন্যাল-ফ্রি সিটি’-তে পরিণত হল কোটা?
আসলে কোটার এই রূপান্তরের মূল শক্তি হল ডিজাইন ভিত্তিক আরবান মোবিলিটি। শহরের আরবান ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ব্যস্ত ক্রসিংগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে গাড়ির গতিপথে সামঞ্জস্য থাকে এবং একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ না হয়। ফলে সিগন্যালিং-র আর কোনও প্রয়োজন থাকছে না।
এছাড়া শহরের ভিতরে গাড়ির চাপ কমিয়ে ট্রাফিককে বাইপাসে চালনা করা হচ্ছে এবং সিগন্যালের বদলে ঘূর্ণায়মান ট্রাফিক ফ্লো দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যস্ত সময়ে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে সময়ও কম লাগছে, জ্বালানির খরচ কমছে। পাশাপাশি দূষণ অনেকটাই কমছে ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস পাচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কোটা মডেল অবশ্যই ভবিষ্যতের দিশা দেখাচ্ছে। কিন্তু সব শহরে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সহজ নয়। কারণ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি বা কলকাতার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে যানবাহনের চাপ এতটাই বেশি যে পুরোপুরি সিগন্যাল তুলে দেওয়া কার্যত ভাবার বাইরে। তাই আংশিক বা স্মার্ট ট্রাফিক মডেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ তলানিতে কাঁচামালের দাম, LPG-র দামে ছ্যাকা! সুরাহা পাবে না মধ্যবিত্তরা?
অন্যান্য ভারতীয় শহরের সিগন্যালিং ব্যবস্থা কেমন?
বলাবাহুল্য, দেশের পরিচ্ছন্নতম শহর ইন্দোর এখন এআই চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবহার করছে। আর এই সিস্টেমে রিয়েল টাইম ট্রাফিক দেখে সিগন্যাল বদলাচ্ছে এবং নজরদারি ও ভায়োলেশন মনিটর করছে। পাশাপাশি হায়দ্রাবাদের সমস্ত রাস্তা সিগন্যাল ফ্রি না হলেও ফ্রি লেফট টার্ন ব্যস্ত শহরের যান চলাচলকে গতি দিচ্ছে। এখন দেখার, ভারতের আর কোনও শহরে ‘ফ্রি-ট্রাফিক সিগন্যাল’ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা হয় কিনা।