ভারতের সর্ববৃহৎ ৫ রেল স্টেশন, যেগুলো ছাড়া অচল গোটা দেশ

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারতীয় রেল (Indian Railways), যার উপর ভর করে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন তাদের গন্তব্যে পৌঁছয়। আর ভারতীয় রেল ব্যবস্থাই বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বড় রেল নেটওয়ার্ক। তবে এই ভারতের স্টেশনগুলি শুধুমাত্র ইট-পাথরের তৈরি কোনো যাত্রীস্থান নয়, বরং এক-একটি জীবন্ত শহর। আজ এমন পাঁচটি বৃহত্তম স্টেশনের কথা বলব, যেগুলি না থাকলে ভারতীয় রেল মুখ থুবড়ে পড়ত। অর্থাৎ, ভারতীয় রেলের মূল ভরসা এই পাঁচটি স্টেশন। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী—

হাওড়া জংশন

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জংশন স্টেশন ভারত তথা বিশ্বের সবথেকে বড় স্টেশন। এই স্টেশনে 23টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এবং ট্র্যাকের সংখ্যা 25টি। প্রতিদিন প্রায় 10 লক্ষের বেশি যাত্রী এই স্টেশন যাতায়াত করেন। পাশাপাশি 600টির বেশি ট্রেন চলে এই স্টেশন দিয়ে। ভারতের সবথেকে প্রাচীন এবং ব্যস্ততম রেল স্টেশন হিসেবে পরিচিত এই হাওড়া জংশন। 1854 সালে এই স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার এই স্টেশন। শুধুমাত্র পরিকাঠামগত দিক থেকে নয়, বরং ইতিহাস, নস্টালজিয়া ও আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গেও গভীর স্পর্শ রেখেছে হাওড়া।

শিয়ালদা স্টেশন

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেশন শিয়ালদা, যেখানে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে 21টি এবং ট্র্যাকের সংখ্যা 28টি। কলকাতার প্রাণভোমরা বলা চলে এই শিয়ালদাকে। এই স্টেশন মূলত সাব-আরবান ট্রেনের জন্যই বিখ্যাত। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে এই স্টেশন দিয়ে। আর রেলওয়ে আধিকারিকদের মতে, শিয়ালদার ভিড় এবং ট্রেন চলাচলের গতি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টকে হার মানিয়ে দেবে।

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস

মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে 18টি। আর সবথেকে বড় কথা, এই স্টেশন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। ভিক্টোরিয়ান গথিক ও ভারতীয় স্থাপত্যের অপূর্ব মিশ্রণে তৈরি এই স্টেশন শুধুমাত্র মুম্বাইয়ের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের ঐতিহ্যের প্রতীক। লোকাল ট্রেন থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রেন, সবকিছুই চলে এই স্টেশনের উপর দিয়ে। আর ব্যস্ততার নিরিখে এটি দেশের অন্যতম দ্রুত চলমান স্টেশন।

চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশন

চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে মেইন লাইনের জন্য 17টি এবং লোকাল ট্রেনের জন্য 5টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বার চেন্নাই সেন্ট্রাল বলতে গেলে এক ঐতিহাসিক স্টেশন। এখান থেকে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের ট্রেন চলে। বিরাট বিল্ডিং, গোলাপি রঙের ঐতিহ্য, নিয়মিত যাত্রী পরিষেবার জন্য এই স্টেশন বিখ্যাত।

আরও পড়ুনঃ ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ লেনদেন বেআইনি! ঐতিহাসিক রায় কেরালা হাইকোর্টের

নিউ দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন

ভারতের নিউ দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে মোট 16টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এবং এখানে ট্র্যাকের সংখ্যা 24টি। এই স্টেশন বিশ্বের বৃহত্তম রুট রিলে ইন্টারলকিং সিস্টেমের জন্য বিখ্যাত। রাজধানীর হৃদয়ে অবস্থিত এই স্টেশনে প্রতিদিন 5 লক্ষ যাত্রী চলাচল করে, আর 350 টির বেশি ট্রেন চলে। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও নিউ দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক, তা বলা চলে। 

এক কথায় এই পাঁচটি স্টেশন শুধুমাত্র দৈনিক যাত্রী পরিষেবার জন্যই নয়, বরং ভারতের ইতিহাস, প্রযুক্তিগত দিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হয়তো এই স্টেশনগুলি না থাকলে ভারতীয় রেল বিশ্ব মঞ্চে এতটা পরিচয় লাভ করতে পারত না, আর রেলের নেটওয়ার্কও এত বিস্তৃত হত না।

Leave a Comment