প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত শনিবার, ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসিকে দেখতে না পেয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মোটা টাকায় টিকিট কেটেও প্রিয় তারকাকে দেখতে না-পাওয়ায় দর্শকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল মাঠে। গ্যালারির চেয়ার ভেঙে ভেঙে মাঠে ফেলা হল। তাঁদের অভিযোগ যুবভারতীতে ঢোকা থেকেই লিয়োনেল মেসিকে কেন ঘিরে রইলেন কর্তা-মন্ত্রীরা? আর এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এবার সেই ঘটনার শিক্ষা পেয়ে গঙ্গাসাগর মেলায় ভিআইপি কালচার নিয়ে কড়া নির্দেশ দিলেন।
ভিআইপি কালচার নিয়ে বার্তা মমতার
রিপোর্ট মোতাবেক গতকাল অর্থাৎ সোমবার, নবান্নে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী সহ রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য, সুন্দরবন উন্নয়ন, পূর্ত, পরিবহন, বিদ্যুৎ, খাদ্য, দমকল, পরিবেশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পদাধিকারীরাও ছিলেন এই বৈঠকে। মূলত ২০২৬ এর গঙ্গাসাগর মেলা নিয়েই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এদিন। আর সেই বৈঠকে এবার ‘ভিআইপি কালচার’ নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও ভিআইপি-র জন্য যেন সাধারণ পুণ্যার্থীদের কোনওরকম সমস্যা না হয়। ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ কোনওভাবেই প্রশ্রয় যেন না পায়।
পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ
জানা গিয়েছে, সাগরদ্বীপে আগামী ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলা চলবে। ১৪ জানুয়ারি পৌষ সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নানের প্রধান তিথি। সেদিন পুণ্যার্থীদের ভিড় থাকবেই। কিন্তু সেই ভিড়কে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। তাইতো মেসি-কাণ্ডের পর জনরোষের গুরুত্ব বুঝে সোমবার এই উচ্চবৈঠকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রীরা যেন ১২ জানুয়ারি মেলায় নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। মেলায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাড়ে তিন হাজার ভলান্টিয়ারকে ট্রেনিং দিয়ে পাঠানো হবে। সকল পুণ্যার্থীদের হাতে রিস্ট ব্যান্ড এবং আইডি কার্ড দেওয়া হবে এবং পুণ্যার্থীদের ইনস্যুরেন্স থাকবে। গোটা বিষয়টি ড্রোন-সিসিটিভিতে নজরদারি চলবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে মজুত থাকবে মোট ২৫০০ বাস, ২৫০ লঞ্চ এবং ২১টি জেটি থাকবে।
প্রসঙ্গত, গঙ্গাসাগর মেলার সুরক্ষা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শনের দিন ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাসাগর সেতুর শিলান্যাস করবেন বলে জানা গিয়েছে। যা তৈরি করতে প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে মেলায় যাওয়ার পথ আরও সুগম করতে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর এই নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যা মূল ভূখণ্ড থেকে সাগরদ্বীপকে সরাসরি যুক্ত করবে এবং ৪৫ মিনিটের রাস্তায় ৫ মিনিটের দূরত্বে নিয়ে আসবে।