বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব এমনকি এক্স সহ মোট 26টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করেছিল নেপাল সরকার। আর তারপরই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দেশের রাজপথে পা বাড়ায় তরুণ প্রজন্ম। সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করার বিরোধিতা জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বহু মানুষ। আর তাতেই অকালে ঝরেছে 20 জনের প্রান। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।
বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক গণহত্যার দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করার পরেই কৃষি ও পশুপালনমন্ত্রী রামনাথ অধিকারী এদিন সকাল সকাল ইস্তফা দিয়ে দেন। দুপুরে ইস্তফা দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
তবে নেপালের রাজপথে তরুণদের প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়তেই পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে বিরাট পুলিশ বাহিনী। এরপরই শুরু হয় হিংসাত্মক সংঘর্ষ। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কার নেতৃত্বে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের প্রতিবাদে পথে পা বাড়ালেন তরুণরা? কার জোরে আন্দোলনে নামলেন তাঁরা?
তরুণদের আন্দোলনের নেপথ্যে সুদান গুরুং
ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করার প্রতিবাদে তরুণ সমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তার নেতৃত্বে রয়েছেন 36 বছর বয়সী সুদান গুরুং (Sudan Gurung)। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই সুদান আসলে হামি নেপাল নামক একটি NGO সংস্থার সভাপতি। তবে ওই NGO সংগঠন আজ নাগরিক আন্দোলনের মুখ।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করে সুদান গুরুং সাফ জানান, তাঁর NGO সংস্থা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে চায়। ওই পোস্টেই পড়ুয়াদের স্কুল পোশাকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মূলত সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হওয়ায় আগে হামি নেপালের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে বিক্ষোভের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সুদান। আর তারপরই তরুনদের আন্দোলনে কেঁপে উঠল নেপালের পথঘাট।
কিন্তু এই সুদান গুরুংয়ের আসল পরিচয় কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বছর 36 এর সুদান 2015 সালের ভূমিকম্পে তাঁর সন্তানকে হারিয়েছিলেন। আর এই ঘটনার পরই জীবনের গতিপথ বদলে যায় তাঁর। খুলে ফেলেন হামি নেপাল নামক ওই NGO সংস্থা। যদিও একটা সময়ে, ইভেন্ট অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করতেন এই সুদান। তার আগে, বিপি কোইরালা ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্সেসের স্বচ্ছতার দাবিতে ধারানের ঘোপা ক্যাম্প বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুদান। আর সেই থেকেই নেপালের গণআন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়েই আওয়াজ তোলেন সুদান। আর এই কাজ করতে করতেই নেপালিদের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। বর্তমানে নেপালে তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনকে জেনারেশন জি-র কণ্ঠস্বর বলে দাবি করা হচ্ছে। নেপালবাসীর মতে, সুদান কিন্তু নিজেকে একজন যোগ্য সংগঠক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
অবশ্যই পড়ুন: এশিয়া কাপে ভারত, পাকিস্তান ম্যাচের দায়িত্বে দুই বাংলাদেশি আম্পায়ার! নাম জানাল ACC
উল্লেখ্য, নেপালে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিবৃতি দিয়েছে নয়া দিল্লি। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আশা করি যে সমস্ত পক্ষ সংযম বজায় রেখে কাজ করবে। শুধু তাই নয়, নেপালে বসবাসকারী ভারতীয়দেরও সংযম বজায় রেখে নেপালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী চলার কথা বলেছে দিল্লি।