মতুয়াদের অপমানের জের! মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ মমতাবালার অনুগামীদের

Mahua Moitra Controversial Comment

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শাসকদলে! তবে এবার কর্মীদের মধ্যে নয়, বিবাদ বাঁধল লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের মধ্যে! সম্প্রতি মতুয়াদের অপমান করায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বিরুদ্ধে গর্জে উঠল মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামী সংগঠন। মতুয়া বিতর্ককে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি লেখা হল চিঠি। যার দরুন রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে এক চাপানউতোর পরিস্থিতি।

ঠিক কী ঘটেছিল?

সম্প্রতি মতুয়াদের সম্পর্কে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে এক চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আসলে কিছু দিন আগে কৃষ্ণনগরের একটি সভা থেকে মহুয়াকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “সারা বছর তৃণমূল, আর ভোটের সময় সনাতনী! এটা কী অঙ্ক ভাই?” শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, “কাজের সময় মমতা, রাস্তার সময় মমতা৷ কাঠের মালা পরে সব তো চলে আসেন ভাই ভাতা নিতে! তখন কী হয়?” আর এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই, মতুয়া সমাজে শাসকদলের প্রতি প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র নিন্দা করেছেন ঠাকুরবাড়ির বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। আর এবার মহুয়ার বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালার অনুগামীরা। মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন তাঁরা।

খোলা চিঠি মমতার উদ্দেশে

রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক খোলা চিঠি পাঠায় ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’। যেখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরী অভিযোগ করেন, “কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র মতুয়া, নমঃশূদ্র, তফসিলিদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে কটাক্ষ করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এমনকি, মতুয়াদের প্রাণপ্রিয় কণ্ঠহার ‘আচারমালা’কে বিদ্রূপ করে ‘কাঠের মালা’ বলে তাচ্ছিল্যভরে অবজ্ঞাসূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। তাতে মতুয়াদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। ফলস্বরূপ সমগ্র মতুয়া-তফসিলি সমাজ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। দয়া করে আপনি মতুয়াদের এই অসম্মানকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন এবং এই ব্যথা নিরসনের জন্য অভিভাবকের ন্যায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

Mahua Moitra Controversial Comment

কী বলছেন মমতাবালা ঠাকুর?

এদিকে ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ এর চিঠির উপরে ‘সঙ্ঘাধিপতি’ হিসেবে মমতাবালা ঠাকুরের নামও উল্লেখ করা রয়েছে। যদিও সাংসদ মমতাবালা নিজে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি মহুয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ আমি সাংসদ হিসেবে কেন ধর্মীয় বিষয়ে নাক গলাতে যাব? আমার তো সংগঠন রয়েছে। ধর্মীয় বিষয় সংগঠনই দেখাশোনা করে। মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য আপত্তিকর। তাই আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সংগঠনের তরফ থেকেই এর প্রতিকার চাওয়া হবে।’’ এমনকি সরাসরি মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে কথা না বলার বিষয়ে তাঁর জবাব, ‘‘যিনি এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন, তাঁর সঙ্গে আমার কোনও কথা বলার ইচ্ছেই নেই।’’ তবে এখনও পর্যন্ত সেই চিঠির কোন প্রতিক্রিয়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: SSC-র পর আরেক দুর্নীতি, রাতের অন্ধকারে নিয়োগ! এবার কড়া নির্দেশ দিল হাইকোর্ট

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরে বরাবরই মহুয়া মৈত্রর মন্তব্য নিয়ে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে। এর আগেও মা কালী বিষয়ক মন্তব্যে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল কৃষ্ণনগরের সাংসদ। তখন দল কৌশলে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। এ বারের মন্তব্যটিও দলের অন্দরে খানিকটা শোরগোল তুলেছে। তার উপর এই ঘটনাযে কেন্দ্র করে মমতাবালার অনুগামীদের সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখা এক ভিন্ন মাত্রা পেল। এখন দেখার, এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপ করেন কি না।

Leave a Comment