মন্দিরে ঢুকতে অস্বীকার, বরখাস্ত ভারতীয় সেনার অফিসার! তিরস্কার সুপ্রিম কোর্টেরও

Christian Army Officer Samuel Kamalesan

প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: দেশের নিরাপত্তা এবং সেবার নিরিখে সেনাদের অন্যতম অঙ্গ হল শৃঙ্খলাপরায়ণতা। সেক্ষেত্রে জাত, ধর্ম কোনো কিছুই গুরুত্ব পায় না। তখন সেক্ষেত্রে একটাই পরিচয় থাকে, আর সেটি হল মনুষত্ব। কিন্তু এবার সেই মনুষ্যত্বকে জলাঞ্জলি দিল এক সেনা কর্মী। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বের উপরে ধর্মকে গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগে আদালতের সমালোচনার মুখে পড়লেন খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী এক সেনা কর্মী স্যামুয়েল কামালেসান (Christian Army Officer Samuel Kamalesan)। এমনকি ওই সেনাকর্মীকে ‘অযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে চাননি খ্রিস্টান সেনা

রিপোর্ট মোতাবেক ২০১৭ সালে ভারতীয় সেনার তৃতীয় ক্যাভালরি রেজিমেন্টের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট ছিলেন স্যামুয়েল কমলেশন। এরপর চলতি বছর মে মাসে ঊর্ধ্বতন আধিকারিকারিকের নির্দেশে মন্দিরে প্রবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে কিন্তু সেটি তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তাই সে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে চাননি, আর তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ঊর্ধ্বতন আধিকারিকারিক। এরপরেই খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ওই অফিসারকে ভারতীয় সেনা থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই মানতে পারেননি তিনি। তাই দিল্লি আদালতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছিল সে। কিন্তু সেখানেও তাঁর পক্ষ নিল না নিম্ন আদালত। এবার নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখল দেশের সর্বোচ্চ আদালতও। ওই আধিকারিক সেনায় থাকার ‘অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

পাল্টা যুক্তি পেশ মামলাকারী আইনজীবির

রিপোর্ট সূত্রে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন স্যামুয়েল কমলেশন। সেই মামলার শুনানি ছিল আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার। স্যামুয়েলের হয়ে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ। তিনি বলেন, “প্রত্যেক রেজিমেন্টের সদর দফতরেই একটি ‘সর্বধর্ম স্থল’ রয়েছে। শুধুমাত্র পঞ্জাবের মামনুনেই একটি মন্দির ও গুরুদ্বার রয়েছে। স্যামুয়েল মন্দিরে ঢুকতে অস্বীকার করেন। বাইরে থেকে পুষ্প নিবেদন করতে রাজি ছিলেন উনি। ভিতরে ঢুকতে চাননি। আর কারও কোনও সমস্যা হয়নি। শুধুমাত্র একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিকই শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ করেন।” এছাড়াও তিনি আরও বলেন, “টার্মিনেশন অর্ডার দেখুন। উনি কলহপ্রিয় নন। সংবিধান প্রত্যেককে ধর্মাচারণের অধিকার দিয়েছে, একই ভাবে অন্য ধর্মাচারণে অংশ না নেওয়ার অধিকারও দিয়েছে।”এরপরেই ওই সেনার প্রতি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রধান বিচারপতি।

আরও পড়ুন: বিনা ব্যয়ে ব্যাপক লাভ! আমতা খাল খননে নতুন প্রকল্প পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল সুপ্রিম কোর্টে

মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন ওই বহিষ্কৃত সেনাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন CJI সূর্যকান্ত। তিনি বলেন, “কী বার্তা দিতে চাইছেন উনি? সেনার আধিকারিক হয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন উনি। শুধু এই কারণেই ওঁর চাকরি কেড়ে নেওয়া উচিত ছিল। এই ধরনের কলহপ্রিয় লোক কি সেনায় থাকার যোগ্য?” তিনি আরও বলেন, “হতে পারে গুণী অফিসার উনি। কিন্তু ভারতীয় সেনার অযোগ্য। গুরুদ্বার অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ জায়গা। উনি যে আচরণ করেছেন, তাতে অন্য ধর্মকে অপমান করা হয় না? এত অহং যে বাকিদের পরোয়া করেন না?” এরপরেই নিম্ন আদালতের রায়কেই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত নেতৃত্বাধী বেঞ্চ।

Leave a Comment