সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দেশজুড়ে পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ নিয়ে দিনের পর দিন উদ্বেগ বাড়ছে। আর ঠিক তখনই আরাবল্লী পর্বত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে (Supreme Court on Aravalli)। প্রশ্ন উঠছে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত কি তাহলে রাজস্থানের ভবিষ্যৎকে আবারও শুষ্ক ও মরুভূমিমুখী করে তুলবে? কী বলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত?
আসলে গত ২০ নভেম্বর একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পাহাড়ি অঞ্চলে খনন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ রায়ে মন্তব্য করেছিল। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছিল, পরিবেশ মন্ত্রকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে আরাবল্লী পর্বতমালার মোটামুটি ৯০ শতাংশ অংশের উচ্চতা ১০০ মিটারের কম। আর এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আদালত বলেছে, ১০০ মিটারের কম উচ্চতার জমিকে আর পাহাড় হিসেবে গণ্য করা হবে না। এই মন্তব্য নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি?
পরিবেশবিদ এবং বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আরাবল্লী পর্বতের একটি বৃহৎ অংশ সংরক্ষণের আওতায় বাইরে চলে যাবে। অর্থাৎ, ১০০ মিটারের কম উচ্চতার এলাকা খনন বা নির্মাণ কার্যের জন্য খুলে যেতে পারে। ফলে খনন লবির সুবিধা বাড়বে, এবং প্রাকৃতিক পাহাড় ধ্বংসের মুখে পড়বে। সেই কারণে পরিবেশ কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশেষজ্ঞরা একে আরাবল্লীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলেই অনুমান করছে।
বলে রাখি, আরাবল্লী পর্বতমালা শুধুমাত্র পাহাড় নয়, বরং রাজস্থানের অস্তিত্বের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতমালাগুলির মধ্যে একটি। আর এর মোট দৈর্ঘ্য ৬৯২ কিলোমিটার যার মধ্যে ৫৫০ কিলোমিটার রাজস্থানে অবস্থিত। এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গুরু শিখর যার উচ্চতা ১৭২৭ মিটার। এটি মাউন্ট আবুতে অবস্থিত। এদিকে আরাবল্লী থেকে উৎপন্ন বহু নদী রাজস্থানের জল সংকট মোকাবিলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরাবল্লী দুর্বল হলে কী হতে পারে?
পরিবেশবিদদের আশঙ্কা মতে, যদি আরাবল্লী পর্বত দুর্বল হয়, তাহলে ভূগর্ভস্থ জলের সংকট দেখা যেতে পারে। এমনকি জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার, রাজস্থানের জলবায়ু চরম রূপ নেবে, এবং উত্তর ভারতের আবহাওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করছে, আরাবল্লীর উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে বর্ষার উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগে যেখানে মৌসুমী বাতাস ধাক্কা দিয়ে পূর্ব রাজস্থানে বৃষ্টি দিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে এখন পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে। এখন দেখার সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কার্যকর হয় কিনা।
মরুভূমি হয়ে যাবে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা!
এছাড়াও আরাবল্লী পর্বত থর মরুভূমিকে ভারতে প্রবেশের থেকে আটকায়। আর এই পর্বত ধ্বংস হলে থর মরুভূমির দরজা খুলে যাবে। জাড় ফলে শুধু রাজস্থানই নয়, উত্তর প্রদেশ থেকে দিল্লি ও হরিয়ানায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে।