মরে ভূত, কিন্তু অ্যাকাউন্টে ঢুকছে পেনশনের টাকা! সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি নয়ছয়

Telengana

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: অবাক কাণ্ড তেলেঙ্গানায়! ২৮ হাজার মৃত ব্যক্তির নামে নিয়মিত পেনশন ঢুকছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে! সরকারি নথিতে নেই কোনো সঠিক রেকর্ড, মাথায় হাত আধিকারিকদের। জানা গিয়েছে, সরকারি প্রকল্প এইধরনের গাফিলতিতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এমনই তথ্য প্রকাশ্যে আনল খোদ রাজ্য সরকার। তেলেঙ্গানা সরকারের পেনশন প্রকল্পে চাঞ্চল্যকর এই গাফিলতির ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে।

ঘটনাটি কী?

‘টাইম্‌‌স অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেলেঙ্গানায় সরকারি চেয়ুথা প্রকল্পের উপভোক্তাদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। মূলত এই প্রকল্পের মাধ্যমে কতজন উপভোক্তা সুবিধা গ্রহণ করে আসছে, সেই নিয়ে করা হয়েছিল সমীক্ষা। আরও তাতেই উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। বিগত কয়েক বছর ধরে নাকি ২৮ হাজার মৃত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬০ কোটি টাকা পাঠিয়ে এসেছে তেলেঙ্গানা সরকার। যেখানে কোনো উপভোক্তা মারা গিয়েছেন ২ বছর আগে তো কেউ আবার ৩ বছর আগে। অথচ পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর খবর জানায়নি। বরং তারা মৃত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মাসের পর মাস টাকা তুলেছে। আর তা দেখেই মাথায় হাত সরকারি আধিকারিকদের।

২৮ হাজার মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ঢুকছে টাকা

চেয়ুথা প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে প্রায় ৪৩ লক্ষ মানুষ মাসিক পেনশন পান। প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা মহিলা, বিড়ি শ্রমিক, HIV রোগী, অবিবাহিত মহিলা সকলের জন্য এই প্রকল্পের আয়োজন করা হয়েছিল। এর জন্য রাজ্য সরকার প্রতি বছর ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে থাকেন। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে কেউ ২০১৬ টাকা পান, কেউ পান ৪০১৬ টাকা। আর এইভাবেই গত এক বছর ধরে ওই টাকা অন্যদের মতো ওই ২৮ হাজার মৃত উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও জমা পড়েছে। এখন কী ভাবে সেই টাকা ফেরানো যায়, তা নিয়ে ভাবনায় আমলারা, চিন্তায় মন্ত্রীরাও।

পরিবারকে দোষারোপ তেলেঙ্গানা সরকারের

তেলেঙ্গানা সরকারের দাবি, উপভোক্তাদের মৃত্যু সম্পর্কে পরিবার থেকে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। পরিবারগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে মৃতদের নাম গোপন করে মাসিক পেনশন তুলেছে। আর তাতেই এত বড় ক্ষতি। অনেকে আবার মৃত সদস্যের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে নিয়ম করে টাকা তোলেন। সম্প্রতি ‘ফিল্ড ইনস্পেক্টর’-এর সমীক্ষা এবং পুরসভার পোর্টালের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হয়েছে। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার মৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাতিলের কাজ শুরু করেছে। কিছু টাকা এখনও তোলা হয়নি, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই যা তোলা হয়েছে, তা ফেরত আনার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে চলছে একের পর এক বৈঠক।

আরও পড়ুন: ২৮ আগস্টেই হবে পরীক্ষা! মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনেও সাড়া দিলেন না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

উল্লেখ্য, তেলেঙ্গানা সরকার যে এই প্রথম ৬০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে তা নয়, এর আগে ২০১৯ সালে তেলেঙ্গানাতেই ৪০ হাজার সরকারি উপভোক্তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল পেনশনের তালিকা থেকে। এমনকি ওই ৪০ হাজার মানুষ মারা গেলেও তা নথিবদ্ধ ছিল না। সেই সময় কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছিল সরকার। আর এই আবহে ফের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির প্রসঙ্গ উঠে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দূর্নীতিমূলক কাজ রোধ করার জন্য আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক যাচাই ও রিয়েল-টাইম ডেটা আপডেটের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Comment