মস্তিষ্কের রোগ থেকে ক্যান্সার, এক ইনজেকশনেই হবে কামাল! বিরাট আবিষ্কার কলকাতার মেয়ের

Injectable Chip

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: একটা সময় মস্তিষ্কের কোনও রোগ নিরাময়ে সার্জারিই ছিল একমাত্র ভরসা। সেক্ষেত্রে মাথার খুলির ভিতর ছিদ্র করা হতো, এমনকি ইলেক্ট্রোড তার বসানো হতো। সবথেকে বড় ব্যাপার, চিকিৎসার খরচ দাঁড়াত লক্ষ লক্ষ টাকা, যা মধ্যবিত্তদের সামর্থ্যের বাইরে। তবে এবার এক অসাধ্য সাধন করলেন কলকাতার জন্ম গবেষক দেবলীনা সরকার। হ্যাঁ, তিনি গোটা চিকিৎসা পদ্ধতি এবার বদলে দিলেন। এমন এক চিপ (Injectable Chip) আবিষ্কার করলেন তিনি, যা শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে দিলেই তা নিজের জায়গা খুঁজে নিয়ে মস্তিষ্কের রোগের সঙ্গে লড়াই শুরু করবে। এবার ভাবছেন নিশ্চয়ই কী সেই প্রযুক্তি? জানতে চোখ রাখুন প্রতিবেদনটির উপর।

এক চিপই বদলে দিল চিকিৎসার সংজ্ঞা

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপিকা দেবলীনা সরকার Circulatronics নামের এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। আর এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন অধ্যায় হিসেবে ধরা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হয় SWED নামের একটি ন্যানো চিপ, যেগুলি এতটাই ছোট যে রক্তকণিকার গায়েও আরামসে বসতে পারে। জানা যাচ্ছে, এই ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক চিপগুলিকে মনোসাইট নামক রোগ প্রতিরোধ কোষের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। রক্তপ্রবাহে এটি ঢোকানোর পর এই হাইব্রিড কোষ শরীরের স্বাভাবিক ইমিউন রুট ব্যবহার করে সহজেই blood-brain barrier পেরিয়ে মস্তিষ্কের অসুস্থ অংশে পৌঁছে যায়।

তবে না, এখানেই শেষ নয়। কারণ, মস্তিষ্কের ভেতর এই কোষ পৌঁছনোর পর বাইরের দিক থেকে একটা ইনফ্রারেড লেজার শো করা মাত্রই এগুলি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠবে আর নির্দিষ্ট নিউরনগুচ্ছে বিদ্যুৎ উদ্দীপনা পাঠায়। এমনকি ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, মাত্র 72 ঘণ্টার মধ্যেই এই চিপগুলি সঠিক জায়গায় গিয়ে নিজে থেকে ইমপ্ল্যান্ট হচ্ছে। তারপর মাত্র 30 মাইক্রোমিটারের মধ্যে একটি অঞ্চলে নিউরন কার্যকলাপ সফল ভাবেই নিমন্ত্রণ করা গিয়েছে।

যুগান্তকারী প্রযুক্তি মস্তিষ্কের চিকিৎসা

বলাবাহুল্য, অ্যালঝাইমার্স, ডিপ্রেশনের মতো জটিল মস্তিষ্কজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে সম্ভাবনাময় চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল ডিপ ব্রেইন সিমুলেশন। কিন্তু এতে সমস্যা ছিল প্রচুর। যেমন ভয়াবহ ইনভেসিভ পদ্ধতিতে খুলিতে ছিদ্র করা হতো, এমনকি মাথার ভেতরে তার ঢোকানো হতো। আর সংক্রমকের ঝুঁকি তো থাকতোই, পাশাপাশি আকাশছোঁয়া খরচ। তবে দেবলীনা বলছেন, একটা ছিদ্র করা সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের প্রোব ঢোকানো, এগুলি বিশ্বের বিরাট অংশের রোগীর নাগালের বাইরে। আর সার্জারির খরচ তো লক্ষ লক্ষ টাকা ছুঁয়ে যায়।

সেই চিন্তাকেই দূর করেছে Circulatronics। কারণ, শুধু হাতে একটি ইনজেকশন আর রক্তস্রোতে ভেসে সমস্যাগুলি সংলগ্ন অঞ্চলে পৌঁছবে। এমনকি শরীরের কোনও কোষও এতে বহিরাগতভাবে আঘাত হানবে না, এবং আক্রমণও হবে না। আর সংক্রমনের ঝুঁকি তো নেই বললেই চলে। পাশাপাশি কোনও ক্ষত বা ব্যথার সম্ভাবনাও নেই। শুধুমাত্র প্রযুক্তির মাধ্যমেই চিকিৎসা করা হবে। গবেষকরা দাবি করছে, মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারবে এই চিপ। আর এতে দীর্ঘ সময় ধরে কোনও কলা বা কোষের ক্ষতিও হবে না।

আরও পড়ুনঃ ২০২৭-এ ছুটবে দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন! দিনক্ষণ, রুট জানালেন রেলমন্ত্রী

উল্লেখ্য, দেবলীনা গবেষণা করে বলছেন যে, Circulatronics শুধুমাত্র মস্তিষ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভবিষ্যতে হৃদযন্ত্রের জন্য ওয়ারলেস পেসমেকার, ক্যান্সারের কোষ খুঁজে ধ্বংস করা, এমনকি ইলেকট্রনিক নিউরন তৈরির দিকেও বিরাট পদক্ষেপ হতে পারে। আর তিনি নিজেই বলেছেন, একদিন সুস্থ মানুষ এটি ব্যবহার করে মস্তিস্কের ক্ষমতা বাড়াতে পারবে। তাই এখন শুধুমাত্র এই প্রযুক্তি চিকিৎসা পদ্ধতিতে যুক্ত হওয়ার পালা।

Leave a Comment