প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দুর্নীতির অভিযোগে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও তাঁর চাকরি বাতিলের নির্দেশে এত দিন স্থগিতাদেশ ছিল। খুবই চিন্তায় ছিলেন সকলে, এমতাবস্থায় গতকাল অর্থাৎ বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, কারও চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। চাকরিরত শিক্ষকদের পরিবারের কথা ভেবে মানবিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে শুধুই কি মানবিক কারণ নাকি এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও অন্য কোন তথ্য?
বহাল রাখা হল ৩২ হাজার চাকরি
রিপোর্ট মোতাবেক গতকাল, বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলা খারিজ করে দেওয়ার সময় ১৪১ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করেছিল। সেই রিপোর্ট পড়লে জানা যায় যে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য যাবতীয় প্রমাণ-সহ আদালতের একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মামলায় যে তথ্য পেশ করা হয়েছে, তাতে বলা যাচ্ছে না যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সেই আবহে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI যে তদন্ত চালিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে অনিয়ম হয়েছে ২৬৪ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে। এছাড়াও আরও ৯৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে পুরো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ভুয়ো হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত।
মামলায় ব্যক্তিগত অভিযোগ বা অপরাধের প্রমাণ নেই
উল্লেখ্য প্রাথমিক নিয়োগ মামলার নির্দেশনামায় স্পষ্ট জানানো হয়েছিল যে ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ বা অপরাধের প্রমাণ নেই। এমনকি ডিভিশন বেঞ্চ এমন কোনও প্রমাণ পায়নি যে নিয়োগের সময় আর্থিক লেনদেন হয়েছে তা বলা হয়েছে। তাই শুধুমাত্র সন্দেহের নিরিখে চাকরি খারিজ করেনি আদালত। এমনকি যে ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ বা অপরাধের প্রমাণ নেই। আর তাই এই সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের।
আরও পড়ুন: সরবে কলকাতা বিমানবন্দরে থাকা বাঁকড়া মসজিদ? দাবি উঠতেই মুখ খুলল
প্রসঙ্গত, চলতি বছর এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসির প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর চাকরি রাতারাতি চলে গিয়েছিল, মুহূর্তের মধ্যে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্যোগের ছায়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল অনেকের। যদিও পড়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি নিয়ম মেনে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করেছিল। আর সেই সময়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল প্রাথমিক মামলায় দুর্নীতি বা বেনিয়মের অভিযোগ। যদিও এবার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্বস্তি মিলল সকলের। কারণ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখল ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি।