মায়ের মৃত্যুর পর সাদা থান পরেই ময়দানে, ইস্টবেঙ্গলকে পরাস্ত করে সমর্থকদের কাঁদালেন অর্ণব!

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বাবা চলে যাওয়ার পর জীবনটা কেমন বেরঙিন হয়ে গিয়েছিল পাঠচক্রের গোলকিপার অর্ণব দাসের। তবে নিজের মনকে বুঝিয়ে জীবনযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন তিনি। এবার পেলেন আরও বড় ধাক্কা। গত রবিবার, 13 জুলাই রাতে মা হারা হন অর্ণব। আচমকা শারীরিক অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় তাঁর মায়ের। পরবর্তীতে মায়ের সৎকার করে ফের জীবনযুদ্ধেই পা রাখলেন অর্ণব।

এদিন মায়ের মুখাগ্নি করে সোমবার পাঠক্রমের হয়ে অনুশীলন করেন বাংলার ছেলে অর্ণব। আর তার পরের দিনই বুকের মধ্যে উথাল পাথাল যন্ত্রণার ঢেউ নিয়েই ইস্টবেঙ্গলকে পরাস্ত করেন এই বঙ্গ ফুটবলার। তবে এদিন পাঠক্রমের জয়টা নিজের মৃত বাবা-মাকেই দূর আকাশে উৎসর্গ করেছিলেন অর্ণব। বলা বাহুল্য, সদ্য মাকে হারিয়ে সাদা থান পরে আসা অর্ণবের লড়াইটা চোখের কোণ ভিজিয়ে ছিল সমর্থকদেরও।

ড্র হতে যাওয়া ম্যাচের ভোল বদলে দিয়েছিল পাঠচক্র

মঙ্গলবার, মামণি গ্রুপ পাঠচক্রের বিরুদ্ধে অনেক আশা নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। জেদ ছিল, ম্যাচ জিতে তবেই মাঠ ছাড়ব! তবে লাল হলুদের সেই ইচ্ছায় জল ঢেলেছে প্রতিপক্ষ। এদিন দুপক্ষের লড়াই দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো শেষ পর্যন্ত ড্র- তেই হবে ম্যাচের সমাপ্তি। সমর্থকদের মস্তিষ্কে যখন এমন ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে মামণি গ্রুপ পাঠচক্রের হয়ে ইস্টবেঙ্গলকে গোল খাওয়ান ডেভিড মোটলা। 87 মিনিটের মাথায় গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।

তবে সবচেয়ে বড় কথা, ডেভিডের দুরন্ত গোলে পাঠচক্র জিতলেও, সমর্থকদের মন কেড়েছেন গোলকিপার অর্ণব দাস। মাকে হারিয়ে দমে যাননি তিনি। জীবন যুদ্ধ থেকে এক চুলও পিছিয়ে আসেননি এই বঙ্গ ফুটবলার। বরং, মাকে দাহ করে পরের দিন পুরোদস্তুর অনুশীলন শেষ করে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সাদা থান পরেই মাঠে নেমেছিলেন অর্ণব। যদিও খেলার আগে জার্সি ও প্যান্ট পরে নিয়েছিলেন খেলোয়াড়। এরপরই, নিঃশ্বাস চেপে ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় দলের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই ছন্দে ফিরল মামণি গ্রুপ পাঠচক্র।

 

অর্ণব দাস – নাম টা আজ হয়তো গোটা বাংলার ফুটবল প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত , একটা সংগ্রামের গল্প যা আজ থেকে বহু বছর…

Posted by Mamoni Group Pathachakra on Tuesday, July 15, 2025

দলের জয়টা মৃত বাবা-মাকেই উৎসর্গ করেছিলেন অর্ণব

প্রথমত ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী দল, তাই আক্রমণেও এগিয়ে থাকার কথা তাদেরই। সেই মতোই বল পায়ে বারংবার পাঠচক্রের দুর্গ ভাঙার চেষ্টা করেছে লাল হলুদ। প্রতিপক্ষকে কাটিয়ে গোল পোস্টেও জাদু দেখাতে মরিয়া ছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে সেখানে বাবা-মায়ের স্মৃতি আগলে শক্ত হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন অর্ণব। ম্যাচের শেষ লগ্নে ইস্টবেঙ্গলের আমন সিকে-কে আটকে দিয়ে আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করে ছিলেন তিনি।

বলা বাহুল্য, এদিন অর্ণবের পারফরমেন্সটা যে শুধুই দলের জন্য ছিল না। কারণ, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে অর্ণব স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এই ম্যাচটা তিনি খেলতে চান তাঁর মা-কে হারানোর দুঃখ ভুলতে। লাল হলুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দলকে জিতিয়ে সেই জয়টা মৃত বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেই ম্যাচ শেষে অর্ণব বলেন, ম্যাচের সেরা অংশটা তিনি তাঁর মা ও বাবাকে উৎসর্গ করেছেন।

অবশ্যই পড়ুন: ১০,৭৩১ রান, ৩৭১টি উইকেট! বশিরের জায়গায় অলরাউন্ডারকে দলে নিল ইংল্যান্ড

সব মিলিয়ে বলা যায়, নিজের ফুটবল শৈলী দেখিয়ে লাল হলুদকে পরাস্ত করেছেন অর্ণব। তবে সেই সাথেই জীবন দায়িনী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাটাও এই ম্যাচের মধ্যে দিয়েই জ্ঞাপন করেছেন বঙ্গ ফুটবলার। লাল হলুদের মতো বড় দলকে আটকে দিয়ে অর্ণব প্রমাণ করেছেন, তিনি পারেন! তিনি পারবেন। যত যন্ত্রণাই আসুক মুখ বুঝে সব সহ্য করে লড়ে যাওয়ার নামই জীবন, সে কথা ফুটবলের ময়দানেই প্রমাণ করলেন মামণি গ্রুপ পাঠচক্রের গোলকিপার।

Leave a Comment