সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বছর ঘুরতেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন প্রকল্প চালু করল ‘শ্রমশ্রী’ (Shramashree Scheme)। হ্যাঁ, গতকাল অর্থাৎ সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবেই এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করলেন।
মূলত ভিন্ন রাজ্যে হেনস্থা হওয়া, বেকারত্ব ও আর্থিক সংকটে পড়ে যারা রাজ্যে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে, সেই সমস্ত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতেই রাজ্য সরকারের এই অভিনব উদ্যোগ। তবে আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানিয়ে দেব, কারা এই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের জন্য যোগ্য, কী কী সুবিধা মিলবে, কীভাবে আবেদন করবেন, কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, ইত্যাদি খুঁটিনাটি তথ্য।
কেন চালু করা হল শ্রমশ্রী প্রকল্প?
আসলে বিগত কয়েক বছর ধরে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার বহু শ্রমিক নানা ধরনের শারীরিক থেকে শুরু করে মানসিক বা আর্থিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই নিজের প্রাণও বলিদান দিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকে কূলকিনারা খুঁজে না পেয়ে বাংলায় ফিরে আসছেন। তবে ফিরে আসার পর তাঁরা কর্মসংস্থানের অভাবে বিপাকে পড়ছে। আর সেই স্থায়ী সমস্যার সমাধান করার তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও আর্থিক নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য শ্রমশ্রী প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেছেন, বাংলার শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে গিয়ে দিনের পর দিন অপমানের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই কাজ পারছেন না, ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না, বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। আবার অনেক শ্রমিকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। আর তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করতেই রাজ্য সরকার শ্রমশ্রী প্রকল্প চালু করছে। এর মাধ্যমে বাংলায় ফিরে আসার পর অন্তত প্রথম এক বছর তাদের প্রতি মাসে 5000 টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।
বিষয়সূচি |
প্রয়োজনীয় তথ্য |
প্রকল্পের নাম |
শ্রমশ্রী প্রকল্প |
উদ্যোক্তা |
পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
কাদের জন্য এই প্রকল্প |
বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক |
অনুদানের পরিমাণ |
প্রতি মাসে 5000 টাকা |
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা |
স্বাস্থ্য সাথী, খাদ্য সাথী, আবাস যোজনা, উৎকর্ষ বাংলার ট্রেনিং |
কত জন সুবিধা পাবে |
22 লক্ষ 40 হাজার শ্রমিক |
আবেদন পদ্ধতি |
অনলাইন |
আবেদন শুরুর তারিখ |
খুব শীঘ্রই শুরু হবে |
বিরোধীদের কটাক্ষ
তবে বিরোধীরা রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পকে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বলেই দাবি করছে। হ্যাঁ, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেছেন যে, এটা তৃণমূল সরকারের আরও একটা স্ক্যাম। কাজের সুযোগ না তৈরি করে টাকা বিলিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভোট কেনার চেষ্টা করছে সরকার। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করে বলেছেন, সবটাই ভোটের উপর ধান্দাবাজি। পরিযায়ী শ্রমিকদের চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া এই প্রকল্প আর কিছুই নয়।
কী কী সুবিধা মিলবে এই প্রকল্পে?
উল্লেখ্য, শ্রমশ্রী প্রকল্পের আওতায় যে সুবিধাগুলি মিলবে বলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সেগুলি হল—
- রাজ্যে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকরা এককালীন 5000 টাকা অনুদান পাবে।
- ওই শ্রমিক যতদিন না কাজ পাচ্ছে, সেই সময়কাল পর্যন্ত অর্থাৎ সর্বোচ্চ এক বছর প্রতি মাসে 5000 টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।
- প্রত্যেক শ্রমিককে এবং তাঁর পরিবারকে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প এবং খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
- আবাস যোজনা প্রকল্পের আওতায় পাকা বাড়ির জন্য বিশেষ অনুদান দেওয়া হবে।
- উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং দেওয়া হবে।
- ওই শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।
- প্রতিটি আবেদনকারী শ্রমিকের জন্য থাকবে বিশেষ শ্রমশ্রী আইডি কার্ড।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
শ্রমশ্রী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক হতে হবে এবং ভিন রাজ্যে হেনস্থার শিকার হয়ে কিংবা কাজ হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে হবে। হ্যাঁ, বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় থাকলেই একমাত্র এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে। এমনকি পরিবারের আর্থিক সংকটের প্রমাণ দেখাতে হবে।
Our Chief Minister, Hon’ble @MamataOfficial, has announced the ‘Shramashree’ scheme for migrant workers in Bengal. Under this welfare initiative, the following support will be provided:
👉🏼 One-time assistance of ₹5,000, including travel allowance support.
👉🏼 Monthly… pic.twitter.com/jNrenC6XXM
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) August 18, 2025
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য যে ডকুমেন্টগুলি চাওয়া হয়েছে, সেগুলি হল—
- পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড কিংবা ভোটার কার্ড।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র।
- ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম পাতার জেরক্স।
- ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার প্রমাণপত্র (যদি থেকে থাকে)।
- পারিবারিক তথ্য অর্থাৎ সদস্য সংখ্যা এবং মাসিক আয়।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতার বিবরণ।
আবেদন পদ্ধতি
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, রাজ্য সরকার খুব শিগগিরই এই প্রকল্পে অনলাইনে আবেদন করার জন্য অফিসিয়াল পোর্টাল চালু করবে। আর সেখানে গিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট আবেদন ফর্মে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক তথ্য দিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সব স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। সবশেষে আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার পর সরকারি দপ্তর আবেদনপত্র যাচাই করবে। উক্ত শ্রমিককে যদি যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হবে।
আরও পড়ুনঃ রিভিউ করেই খুলল ভাগ্য! NEET-এ গোটা ভারতে প্রথম স্থান দখল আসানসোলের কল্যাণের
কত জন পাবে প্রকল্পের সুবিধা?
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, রাজ্যে ইতিমধ্যেই 22 লক্ষ 40 হাজার শ্রমিকের সরকারি তালিকায় নাম নথিভুক্ত রয়েছে। আর সেই সমস্ত শ্রমিকরা সরাসরি এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে, তা বলা চলে। আর এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ কার্যক্রম থাকবে মুখ্যসচিবের তত্ত্বাবধানে। এখন দেখার, কবে এই প্রকল্পে অনলাইনে আবেদন শুরু হয়।