সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: রাজ্য সরকারের চালু করা ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প (Shramashree Scheme) নিয়ে ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তবে রাজ্যের এই নতুন প্রকল্পের সুবিধা নিতে গেলে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবশ্যই কর্মসাথী পোর্টালে নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে। আর সে কারণেই এবার নাম নথিভুক্তির জন্য ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক।
বর্তমানের এক রিপোর্ট বলছে, গত কয়েকদিনে শুধুমাত্র নদীয়া জেলা থেকেই প্রায় দেড় হাজার পরিযায়ী শ্রমিক আবেদন করেছেন। আর এর মধ্যে সবথেকে বেশি আবেদন এসেছে কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, তেহট্ট ও করিমপুর এলাকা থেকে।
শ্রমশ্রী প্রকল্প কী সুবিধা মিলছে?
জানিয়ে রাখি, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিশেষ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। হ্যাঁ, ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার সময় এককালীন 5000 টাকা দেওয়া হবে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে। পাশাপাশি পুরো এক বছর ধরে প্রতি মাসে 5000 টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। এমনকি এই প্রকল্পের আওতায় উৎকর্ষ বাংলার মাধ্যমে দক্ষতা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং স্বাস্থ্য সাথী, খাদ্য সাথী বা আবাস যোজনা প্রকল্পের সুবিধাও দেওয়া হবে।
তাহলে কর্মসাথী পোর্টালের গুরুত্ব কোথায়?
বলে রাখি, কর্মসাথী পোর্টাল মূলত কয়েক বছর আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য নধিভুক্ত করার জন্য চালু করা হয়েছিল। আর এবার শ্রমশ্রী প্রকল্পের জন্য শর্ত রাখা হয়েছে যে, শ্রমিকদের অবশ্যই এই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অনেকের নাম আগে থেকেই এই পোর্টালে ছিল। তবে নতুন প্রকল্প ঘোষণার পর আরো বেশি শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করছে।
কর্মসাথী পোর্টালে কীভাবে নাম নথিভুক্ত করবেন?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মসাথী প্রকল্পে অফলাইন কিংবা অনলাইন, দুইভাবেই আবেদন করা যায়। অফলাইনে আবেদন করার জন্য অবশ্যই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিকটবর্তী কোনো দুয়ারে সরকার ক্যাম্প বা আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান ক্যাম্প থেকে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পেই জমা করতে হবে।
তবে অনলাইনে আবেদন করার জন্য অবশ্যই ইচ্ছুক শ্রমিককে কর্মসাথী প্রকল্পের অফিসিয়াল পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে। তারপর হোমপেজে “Scheme” অপশনে ক্লিক করলে কর্মসাথী প্রকল্পের অপশন দেখা যাবে। সেখানে ক্লিক করলেই আবেদনপত্র খুলবে। তবে নতুন আবেদনকারী হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নিতে হবে। তারপর নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। উল্লেখ্য, আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ফর্মটি আর-একবার চেক করে নিতে হবে যে সবকিছু ঠিকঠাক দেওয়া হয়েছে কিনা। সবশেষে ফাইনাল সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই আবেদনপত্র জমা পড়বে।
কেন শ্রমশ্রী প্রকল্প?
উল্লেখ্য, নদীয়ার বহু শ্রমিক কাজের খোঁজে উড়িষ্যা, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, কেরালা, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্যে যেত। এমনকি দুবাই বা কাতারের মতো দেশেও পাড়ি জমিয়েছিলেন অনেকে। তবে সম্প্রতি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তাদের বাংলাদেশী সন্দেহে হেনস্তার অভিযোগ দিনের পর দিন বাড়ছিল। অনেককে আটক করে জেরা করা হচ্ছে, এমনকি মারধরও করা হচ্ছে। আর এই ঘটনার প্রতিবাদেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন প্রকল্প চালু করেছেন।
আরও পড়ুনঃ ‘বোঝা যাচ্ছে যে DA মামলায় জয় নিশ্চিত!’ বিরাট দাবি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীর
মাননীয়া জানিয়েছেন, ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের যেন আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তার জন্যই এই বিশেষ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। শ্রম দপ্তর ইতিমধ্যেই শ্রমশ্রী প্রকল্পের জন্য আলাদা মোবাইল অ্যাপ এবং পোর্টাল চালু করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফলত খুব শীঘ্রই অনলাইনে মাধ্যমে এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে বলে জানা যাচ্ছে।