মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য ভারত? কী বলছে আইন?

Sheikh Hasina

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (Sheikh Hasina) মানবতাবিরোধী অপরাধে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ফাঁসির সাজা দিয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি ভারতের মাটিতেই রয়েছেন। আর সেই কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নয়া দিল্লির কাছে তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি তাহলে নৈতিকভাবে হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য? আসলে এই প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, আর দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন প্রতিবেদনটির উপর।

হাসিনাকে ফেরতের দাবি বাংলাদেশের

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারতের কাছে আবারও একটি চিঠি পাঠানো হবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি কূটনৈতিক নোট পাঠানো হয়েছিল। ভারত তার প্রাপ্তি স্বীকার করলেও প্রকাশ্যেক সেরকম কোনও অবস্থান নেয়নি। এদিকে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সেই সময় বলেছিলেন, বিষয়টি এখন সংবেদনশীল। আইনের দিক থেকেই তা যাচাই করা হবে। নাহলে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। পরবর্তী সময়ে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী জানান, এটি বিচার বিভাগীয় এবং আইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমাধান হবে। আলোচনার দরকার রয়েছে।

ভারত কী হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য?

বেশিরভাগের মতে, ভারত হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে কোনওভাবেই বাধ্য নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্যজ্যোতি মজুমদার বলছেন, চুক্তি থাকলেও কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্তগুলি মানলে ভারত হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয়। এদিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সব্যসাচী রায়চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে এমন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা বাধ্যতামূলক নয়। আবার কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেছেন, হাসিনা সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন করতে পারেন। তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবেও ধরা যেতে পারে।

প্রত্যর্পণ চুক্তি কী বলছে?

বলাবাহুল্য, ২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আর ২০১৬ সালে তা আরও সহজ করে দেওয়া হয়। সেখানকার মূল পয়েন্টগুলোতে প্রত্যর্পণ করা এবং না করার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, প্রত্যর্পণ করা যাবে শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে, যখন এক বছরের বেশি সাজা হতে পারে এমন অপরাধ হবে, অপরাধটি দুই দেশেই শাস্তিযোগ্য হতে হবে এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ বলছে, হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাই তাঁকে ফেরত চাইছে।

তবে ওই চুক্তি অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। চুক্তিতে স্পষ্ট বলা রয়েছে, রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধে কোনও প্রত্যর্পণ হবে না। এমনকি বিচার যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়, তাহলে প্রত্যর্পণ কোনওভাবেই সম্ভব নয়। আর যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি থাকে, তাহলেও প্রত্যর্পণ নয়। সেই সূত্রে বর্তমানে হাসিনার জীবন ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। তাই প্রত্যর্পণ করা হয়তো এখনই সম্ভবপর নয়। কিন্তু হাসিনা বারবার দাবি করেছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বিচারের নামে প্রহসন। তাই ভারত এই ধারাগুলি তুলে ধরে অনায়াসে তাঁর প্রত্যর্পণ এড়িয়ে চলতে পারে।

আরও পড়ুনঃ জনসংখ্যা ৩.৬৬ কোটি, আধার কার্ড ইস্যু হয়েছে ৪.৯৬ কোটি! চাঞ্চল্যকর ঘটনা কেরালায়

তবে জেনে রাখা হলো, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পদ্মাপাড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল। সেই বছর ৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ছাড়েন এবং নয়া দিল্লিতে আশ্রয় নেন। তবে অন্দরমহল সূত্রে খবর, দিল্লি কোনওদিন তাঁকে প্রকাশ্য সমর্থন করেনি। কিন্তু ফেরত পাঠানোর জন্যও জোর দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। রাজনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো নয়। আর এই অবস্থায় একজন ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায়  জোর দেওয়া সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আশাবাদী ওয়াকিবহাল মহল। তাই আশা করা যায়, এত তাড়াতাড়ি হাসিনার প্রত্যর্পণ সম্ভবপর হবে না।

Leave a Comment