মেলেনা জল, চাষের অনুমতি! তৃণমূল নেতার নির্দেশে ৩ বছর একঘরে আরামবাগের পরিবার

hooghly arambagh family boycott

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: জায়গার দখলদারি নিয়ে বিবাদের জেরে এবার সামাজিক বয়কটের শিখার হুগলির আরামবাগের এক পরিবার! অভিযোগের তীর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। ঘটনাটি ঘটেছে, খানাকুল ১ নম্বর ব্লকের অরুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্দাইপুর গ্রামে। অভিযোগ এলাকার এক দাপুটে তৃণমূল নেতার নির্দেশেই নাকি সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়েছে পরিবারটিকে। জমিতে চাষবাস থেকে শুরু করে পাড়ার কল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ সবকিছুর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ঘটনাটি কী?

স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্দাইপুর গ্রামে একটি জায়গার দখলদারি নিয়ে বছর তিনেক আগে এই গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। ওই বিতর্কিত জমিতে একটা পুরোনো কাছারি বাড়ি রয়েছে। তারই লাগোয়া জমিতে গ্রামের লোকেরা পুজো করেন। সব মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ২১ শতক। তার মধ্যে সাড়ে ১০ শতক জমি রঞ্জিত মণ্ডল–সহ মোট তিনটি পরিবারের নামে রেকর্ড করা হয়েছিল। গ্রামের মাতব্বরদের সঙ্গে এই নিয়ে বিবাদ বাধে। এই নিয়ে রঞ্জিত মণ্ডলের পরিবার প্রতিবাদ করলে সমস্যার সমাধান না হয়ে উল্টে তাঁর পরিবারকেই নিশানা করা হয়। এই নিয়ে আদালতে মামলা করা হয়। কিন্তু নিম্ন আদালতে হেরে যাওয়ার পরে হাইকোর্টে পুনরায় মামলা করেন রঞ্জিত মণ্ডল। এমতাবস্থায় পরিবারের উপর নেমে আসে সমাজের তীব্র হুমকি।

একঘরে করে রাখা হয় পরিবারকে

হুগলির খানাকুলের বন্দাইপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ–সভাপতি অশোক কোলের বিরুদ্ধে এদিন রঞ্জিত মণ্ডলের পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা তথা খানাকুল ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহসভাপতি অশোক কোল স্থানীয় মাতব্বরদের সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, গ্রামের কেউ রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। যার ফলে তাঁদের ভয়ে গ্রামবাসীরাও কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এমনকি জমিতে চাষাবাদ করতেও বাধা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সরকারি টিউবওয়েল থেকে জল সংগ্রহেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। মহা বিপদে পড়েছে গোটা পরিবার।

অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল নেতার

দিনের পর দিন পরিবারের ওপর এই অকথ্য অত্যাচারে অতিষ্ট রঞ্জিত মণ্ডলের মা সুষমা মণ্ডল। তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁদের বাথরুম পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেউ কথা বললে তাঁকেই জরিমানা দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। দিশেহারা হয়ে পড়েছি সকলে। এমনকি রঞ্জিত নিজেও জানান, এই ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরছেন তাঁরা। তবু সুরাহা মেলেনি। পুলিশও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত প্রাক্তন সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা অশোক কোলে। তিনি বলেন, ‘এ সব মিথ্যা অভিযোগ। আদালতে মামলা চলছে। কেউ সামাজিক বয়কট করেনি। পুলিশ সবটা তদন্ত করে দেখুক। আসল সত্যটা বেরিয়ে আসবে।’

আরও পড়ুন: পুরুষকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ সজল ঘোষের বিরুদ্ধে! মুখ খুলল পুলিশও

কটাক্ষ বিজেপির

প্রসঙ্গত, নির্বাচনের আগে দলের অন্দরে এই কার্যকলাপ নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ খানাকুল ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি মিন্টু পাল। তিনি বলেন, “ঘটনাটি খুবই নিন্দাজনক। এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ধরণের ঘটনাকে কখনও প্রশ্রয় দেন না। দল নিশ্চয় বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে।” কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশান্ত বেরা বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে প্রতিবাদ জানাব। যত দূর যেতে হয় যাব। গোটা রাজ্যেই এই পরিস্থিতি চলছে। রঞ্জিত মণ্ডল একজন নিরীহ মানুষ। আমরা যতটা সম্ভব ওনার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।”

Leave a Comment