সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান গাওয়া নাকি রাষ্ট্রদ্রোহ!’ আসামের শ্রীভূমি জেলার একটি দলীয় অনুষ্ঠানে একজন কংগ্রেস নেতা “আমার সোনার বাংলা” যেটি কিনা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এই ঘটনা তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এবার এই ইস্যুতেই দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিলেন বাংলা পক্ষর (Bangla Pokkho) সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
প্রতিবাদের ডাক বাংলা পক্ষ-র
তিনি এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, আজ ২ নভেম্বর রবিবার ৭টায় ভারত জুড়ে বাঙালিদের প্রতিবাদ করা হোক। তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া হয়ে গিয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ। চুপ থাকবে বাঙালি? বিজেপি দল রবীন্দ্রনাথের গান ‘আমার সোনার বাংলা’ এটিকে ভারতের মাটিতে গাওয়া শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি, এটা যে গাইবে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেবে সরকার। শুধু ঘোষণা করেনি, বরং দিয়েছে। এমনকি এই পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি নেতারা বলেছেন এই সোনার বাংলা গানটি গাওয়া যাবে না।’
গর্গ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার অবধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এবার আজ বিজেপিও সেই একই কাজ করছে। আমি তাই বাংলা পক্ষ’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভারতে প্রতিটি বাঙালির কাছে এই স্পষ্ট আবেদন জানাচ্ছি ২ নভেম্বর সন্ধে ৭টায় আমরা সবাই একটা স্পষ্ট কথা বলব। কী বলবো? বলব যে আমি বাঙালি, আমি পশ্চিমবঙ্গের, বা আপনি যে রাজ্যের হোন, আমি রবীন্দ্রনাথের জাতির মানুষ, আমি আমার সোনার বাংলা গাইব। কারোর যদি কিছু করার থাকে করে নিক। আমরা গাইব, আমরা শুনবো, আমরা বাজাবো।’
আমার সোনার বাংলা গানের ইতিহাস
“আমার সোনার বাংলা” গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা প্রথম বঙ্গভঙ্গের সময় লিখেছিলেন। গানটি বাংলার ঐক্য এবং ঔপনিবেশিক নীতির বিরোধিতার প্রতীক হয়ে ওঠে। বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ গানটি লিখেছিলেন। ভারত ভাগের পর, বাংলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পাকিস্তানের অংশ হয়ে ওঠে , যা পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার বেশিরভাগই ছিল বাংলাভাষী। পাঞ্জাবিভাষী জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তার করে, যার ফলে পূর্ব বাংলাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৭১ সালে, পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং একটি পৃথক জাতি, বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা করে। বাংলাদেশ বাঙালি পরিচয় এবং সংস্কৃতির প্রতীক এই গানটিকে তার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয়।