বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সরকারের এক সিদ্ধান্তেই হাড়িতে টান পড়েছে বাংলার বিভিন্ন শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকদের। জানা যাচ্ছে, আগে বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা এমনকি পুরুষরাও হলুদ থেকে শুরু করে লঙ্কা, পাপড়, জিরের গুঁড়ো, সাবান, ধুপকাঠি সহ নানান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ডিস্ট্রিবিউটরদের হাত ধরে রেশন ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
তারপরই সেগুলি পৌঁছে যেত বাংলার ঘরে ঘরে। তবে পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তরের সিদ্ধান্তে বহুদিন হয়েছে সেই নিয়মে ছেদ পড়েছে। রাজ্য খাদ্য দপ্তরের সেক্রেটারি পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকী হঠাৎ নতুন অর্ডার জারি করে জানিয়ে দেন, এই পুরনো পদ্ধতিতে আর কাজ করা যাবে না।
এবার থেকে প্রতিটি রেশন দোকানে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতে হবে সাপ্লায়ারদের। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পরই কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা শ্রমিক থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউটার সকলেরই।
সরকারি নিয়মের কারণে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ!
সূত্রের খবর, হলুদ থেকে শুরু করে জিরে অথবা সাবান, সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে সরকারের নতুন নিয়মের বেড়াজালে একেবারে জড়িয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের একটা বড় অংশের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তর যে ফরমান জারি করেছে তা মেনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশন দোকানগুলিতে সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
একদিকে হাওড়ার মানুষদের পক্ষে যেমন কোচবিহারের প্রতিটি প্রান্তে শয়ে শয়ে রেশন দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনই উত্তরবঙ্গের সাপ্লায়ারদের পক্ষেও কলকাতায় এসে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রেশন দোকানগুলিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সাপ্লাই করাটা একেবারে দুঃসাধ্য বিষয়। মূলত সে কারণেই, সরকারি নিয়মের জালে আটকে পড়েছেন ডিস্ট্রিবিউটার থেকে শুরু করে কর্মীরা। আপাতত সরকারের নতুন নিয়ম জারি থাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে রুটি রুজির জায়গাও।
পুরুষ থেকে শুরু করে মহিলা কাজ হারিয়েছেন সকলেই। সরকারি নিয়মে আকস্মিক বদল আসায় কার্যত সংসার ভেসে যায় ভেসে যায় অবস্থা বাংলার বহু মহিলার। তাঁদের বক্তব্য, আগে এই কাজ করে যেটুকু যা টাকা আসতো, বর্তমানে সেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাবেন তাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কোম্পানির ম্যানেজার সৌমিত্র ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আগে আমরা বাজার মূল্যের থেকেও কম দামে ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন রেশন দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠাতাম। তবে হঠাৎ রাজ্য সরকারের নতুন নিয়মের কারণে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের এমন কঠোর নীতির কারণে, কোম্পানি যেমন বসে গিয়েছে সেই সাথে কাজ হারিয়ে বেকার বহু কর্মচারী। সৌমিত্র বাবুর দাবি, পুরনো ব্যবস্থাই ফিরিয়ে আনুক সরকার। তাতে কর্মচারীরাও কাজে ফিরতে পারবেন। তাঁদের সংসারটাও বাঁচবে।
অবশ্যই পড়ুন: এই দিন IPL থেকে অবসর নেবেন বিরাট! কোহলির সিদ্ধান্ত ফাঁস করলেন RCB তারকা
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দু বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তরের নতুন নিয়মের কারণে কাজ হারিয়ে ঘরে বসে রয়েছেন বাংলার বহু শ্রমিক। তবে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার রোজগার বাঁচাতে খাদ্য দপ্তরের সেক্রেটারি থেকে শুরু করে সরকারের নানান দপ্তরে বহু আকুতি মিনতি জানিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা থেকে শুরু করে শ্রমিক শ্রেণীর সংগঠনগুলি। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। তবে তাদের একটা বড় অংশের আশা, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়তো নিশ্চয়ই তাঁদের দিকে মুখে তুলে চাইবেন!