সহেলি মিত্র, কলকাতা: ঘুষ নেওয়ার মূল্য যে সকলকে এভাবে দিতে হবে সেটা হয়তো কেউ স্বপ্নেও ভাবতেও পারেননি। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলা থেকে এমন এক ঘটনার খবর সামনে উঠে আসছে যা সকলকে অবাক করে রেখে দিয়েছে। দুর্নীতির শিকার হওয়া এক মহিলার থেকে ঘুষ নিতে গিয়ে বলা ভালো অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে মারণ রোগ নিয়ে ফিরলেন ১৩ জন। সকলে আক্রান্ত হলেন এইডস (AIDS)-এ। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। আরও বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই প্রতিবেদনটির ওপর।
সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার নামে মহিলাকে লাগাতার শোষণের অভিযোগ!
স্থানীয় সূত্রে খবর, আক্রান্ত হওয়া এই ১৩ জন ব্যক্তি সাধারণ মানুষ নন। কেউ গ্রামপ্রধান, কেউ কর্মসংস্থান কর্মকর্তা এবং কেউ খাদ্য বিভাগের কর্মচারী। তারা রেশন কার্ড এবং বিধবা পেনশন পাওয়ার জন্য এক মহিলার কাছ থেকে ঘুষ চেয়েছিলেন। আর সেই ঘুষ কোনও টাকার অঙ্কের ছিল না; তারা দাবি করেছিলেন যে মহিলাটির সঙ্গে তাঁরা শারীরিকভাবে মিলিত হতে চান। মহিলার সম্ভবত তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
মহিলার স্বামী মারা গেছেন অনেকদিন। ২৪ বছর বয়সী ভুক্তভোগী গোরক্ষপুরের ভাটহাট গ্রামে বিয়ে করে এসেছিলেন। তার স্বামী মুম্বাইয়ের একটি কারখানায় শ্রমিক ছিলেন। তাদের বিয়ের মাত্র তিন বছর পরেই তিনি মারা যান। তিনি প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন এবং সন্দেহ করা হয় যে তারও এইডস ছিল। সন্দেহ করা হচ্ছে যে ভুক্তভোগী তার স্বামীর কাছ থেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। ভুক্তভোগীর কোনও সন্তান নেই। ভুক্তভোগী ভেবেছিলেন রেশন কার্ড এবং বিধবা পেনশন তার জীবনকে সহজ করে তুলবে। তিনি গ্রামের একজন কর্মসংস্থান কর্মকর্তার সাহায্য চেয়েছিলেন। কর্মকর্তা তাকে গ্রাম প্রধানের কাছে নিয়ে যান। প্রধান তাকে গ্রাম সচিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এছাড়াও, আরও নয়জন ব্যক্তি এই তিনজনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন, যারা ঘুষের বিনিময়ে তাকে যৌন লালসার শিকার করতে চেয়েছিলেন।
AIDS-এ আক্রান্ত ১৩ জন
এটি প্রায় তিন বছর ধরে চলতে থাকে। এই ১৩ জন ঘুষের বিনিময়ে তাকে শোষণ করেছিল। তারপর একদিন মহিলা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি গ্রাম প্রধানকে জানান। প্রধান তাকে একজন হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করান। যখন কোনও উন্নতি না হয়, তখন একজন ডাক্তার তার রক্ত পরীক্ষা করেন। ফলাফল মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে সকলের। তখনই জানতে পারেন মহিলার এইডস হয়েছে। এদিকে সরকারি পরিষেবার বিনিময়ে তার সাথে যারা যৌন সম্পর্ক করেছিল তারাও একে একে অসুস্থ হতে থাকে এবং পরবর্তীকালে এইডস- এ আকান্ত হওয়ার খবর মেলে। এই ঘটনা ২০১৮ সালে ঘটেছিল। সেই সময়ে এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশ তথা গোটা ভারতকে অবাক করে রেখে দিয়েছিল। কেউ কখনও জানতেও পারতেন না যে একজন মহিলাকে রেশন কার্ড এবং বিধবা পেনশনের মতো প্রয়োজনীয় সরকারি সাহায্য পেতে কত বড় মূল্য দিতে হয়।
প্রতি মাসে কয়েক কেজি শস্যের জন্য তাকে ১৩ জন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রাখতে হত। এই ঘটনাটি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির গভীরতা দেখায়। সেইসময়ে এই খবরটি দাবানলের মতো জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা বলছেন যে এই ১৩ জন পুরুষ তাদের কর্মের ফল ভোগ করেছেন।