লোহা খেয়ে সোনা বার করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া! বড় খোঁজ বিজ্ঞানীদের

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: কখনো কি কল্পনা করেছেন, ব্যাকটেরিয়া থেকেই সোনা বের হচ্ছে? হ্যাঁ মাটির ভিতরে ভারী ধাতু খেয়ে খেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সোনার টুকরো বানিয়ে ফেলছে এই ব্যাকটেরিয়া। এক কথায় সেই সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসের মতো গল্প! জানা গিয়েছে, এই ব্যাকটেরিয়ার নাম Cupriavidus Metallidurans, যা মূলত এমন জমিতে বসবাস করে, যেখানে প্রচুর পরিমাণে তীব্র বিষাক্ত ধাতু, যেমন তামা বা সোনা থাকে।

বিজ্ঞানীরা কী বলছে?

2018 সালে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করে। তাদের সেই গবেষণা প্রকাশিত হয় Metallomics নামক একটি জার্নালে। আর এই গবেষনাতেই প্রথমবার বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যে কীভাবে এই ব্যাকটেরিয়া সোনার কণা তৈরি করে। আসলে এর পিছনে কিছু নির্দিষ্ট উৎসেচক বা এনজাইম কাজ করে, যার মধ্যে অন্যতম হল CupA ও CopA।

ব্যাকটেরিয়াগুলি কীভাবে কাজ করে?

জানা যাচ্ছে, এই ব্যাকটেরিয়া এমন মাটিতে থাকে, যেখানে প্রচুর পরিমাণে তামা ও সোনা রয়েছে। পাশাপাশি থাকে হাইড্রোজেন, যা থেকে এই ব্যাকটেরিয়া শক্তি গ্রহণ করে। যখন মাটিতে বেশি পরিমাণে তামা থাকে, তখন এই ব্যাকটেরিয়া CupA এনজাইম সক্রিয় করে তোলে যা, অতিরিক্ত তামাকে কোষের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে এবং ব্যাকটেরিয়াও থাকে সুস্থ।

অন্যদিকে তামা ও সোনার যৌগ একসঙ্গে থাকলে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে ওঠে। তখন এই যৌগগুলি ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষাক্ত হিসেবে কাজ করে। হ্যাঁ, তখন CupA এনজাইম বন্ধ হয়ে যায় এবং CopA নামের একটি এনজাইম সক্রিয় হয়। আর এই এনজাইম তামা এবং সোনার যৌগগুলিকে এমনভাবে রূপান্তরিত করে, যা ব্যাকটেরিয়ার কোষে প্রবেশ করতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ বিলেতি মদ থেকে গাড়ি, ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জেরে ভারতে দাম কমবে একাধিক পণ্যের

তাহলে কীভাবে তৈরি হয় সোনার কণা?

যেহেতু এই যৌগগুলি ব্যাকটেরিয়ার কোষে প্রবেশ করতে পারে না, তাই সেগুলি ব্যাকটেরিয়ার বাইরের স্তরেই জমা হয়ে সোনার আস্তরণ গড়ে তোলে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা আকারেই এই সোনা থাকে, যার আকার মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার। সম্প্রতি এক গবেষক জানিয়েছেন, এই মাটিগুলি অত্যন্ত কঠিন হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রোজেন আর সেরকম প্রতিযোগিতা না থাকার ফলে এখানে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি বহুদিন টিকে থাকে। কিন্তু শর্ত একটাই, বিষাক্ত ধাতু থেকে বাঁচার কৌশল তৈরি করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে।

Leave a Comment