শেষ পর্যায়ে বাংলার SIR প্রক্রিয়া! কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, কাদের নাম বাদ যাবে জেনে নিন

West Bengal SIR

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর (West Bengal SIR) নিয়ে তোড়জোড়। আর এসআইআর এর চূড়ান্ত তালিকা ধরেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন করতে চাইছে। যেমনটা বিহারে হচ্ছে। তবে অনেকের মনে এখন প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর করতে গেলে ঠিক কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন, কাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে, কাদের নামই বা থাকবে? বিহারের এসআইআরের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এসআইআরের কী পার্থক্য রয়েছে? আজকের প্রতিবেদনের সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হল।

এসআইআরের জন্য কী কী দরকার?

প্রতিবছরই ভোটার তালিকা সংশোধন করে থাকে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় বা অবৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়ে। তবে এবারের সংশোধন হবে নিবিড়ভাবে। নাম তোলা বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে অনেক গড়িমসি থাকত। তবে এসআইআরের মাধ্যমে সমস্ত ভোটারের নাম নতুন করে নতিভুক্ত করতে হবে। এমনকি দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনও বৈধ ভোটার বাদ না যায় এবং অবৈধ ভোটার তালিকায় না থাকে। এদিকে বাংলায় ২০০২ সালে শেষবার ভোটার তালিকার সংশোধন হয়েছিল। আর গত ১০ থেকে ১৫ বছরে গোটা দেশে এ নিয়ে আর কোনও কাজ করেনি কমিশন। তবে বিজেপি দাবি করছে, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে দিনের পর দিন প্রচুর অনুপ্রবেশকারী ঢুকছে ভারতে, যারা এদেশেই ভোটার তালিকায় নাম তুলে নিচ্ছে। আর সে কারণেই এবার এসআইআরের তোড়জোড়।

কী কী ডকুমেন্ট দরকার হবে?

পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের সময় বুথ লেভেল অফিসাররা বাড়িতে বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দেবে। আর সেই ফর্মের সঙ্গে কমিশনের বেঁধে দেওয়া ১১টি ডকুমেন্ট দিতে হবে। ডকুমেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • ১) কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকারের কর্মী হিসেবে কাজ করছেন বা পেনশন পান, এমন কোনও পরিচয়পত্র
  • ২) জন্ম সার্টিফিকেট
  • ৩) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বা স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া যে কোনও ডকুমেন্ট
  • ৪) পাসপোর্ট
  • ৫) মাধ্যমিক কিংবা তার আগের কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • ৬) রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ মারফৎ দেওয়া কোনও বাসস্থানের সার্টিফিকেট
  • ৭) ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট
  • ৮) নাগরিকের ন্যাশনাল রেজিস্টার সার্টিফিকেট
  • ৯) জাতিগত শংসাপত্র
  • ১০) স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া কোনও পারিবারিক রেজিস্টার সার্টিফিকেট
  • ১১) জমি অথবা বাড়ির দলিল।

এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড দেখানো যেতে পারে। তবে তা দেখে নাগরিকত্ব দাবি করা যাবে না। এমনকি কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ডের সঙ্গে এই ১১টি নথির যে কোনও একটিকে দিতেই হবে। আর এই ১১টি নথির বাইরে কোনও নথি যদি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারে, সেগুলিও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে।

কাদের নাম বাদ পড়বে?

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পরিবারের কারোর নাম নেই, এরকম ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ করতে যারা ব্যর্থ হবে, তাদের নামই একমাত্র এই তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। পাশাপাশি কমিশন আর ভোটার তালিকায় থাকা সমস্ত মৃত বা অবৈধ ভোটারের নামও বাদ পড়বে। এমনকি যারা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে বা দু’জায়গায় ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে, তাদের নামও বাদ পড়বে। পাশাপাশি কারচুপি করে তালিকা নাম তোলা ব্যক্তিদেরকে অবৈধ ভোটার হিসেবে গণ্য করা হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বা মায়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদেরকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, ১১টি ডকুমেন্টের মধ্যে যে কোনও একটি ডকুমেন্ট দিলেই সেই ব্যক্তির নাম তালিকায় থাকবে। বাদবাকি সবার নাম বাদ পড়বে।

তবে পশ্চিমবঙ্গে কত নাম বাদ পড়বে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট তথ্য কমিশনের হাতে নেই। কিন্তু আধিকারিকদের একাংশ মনে করছে যে, ১ কোটির কাছাকাছি নাম হয়তো বাংলা থেকে বাদ পড়তে পারে। কারণ, তারা যুক্তি দিচ্ছে, ২০০২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের হিসাব ধরলে মৃত এবং অন্যত্র চলে গিয়েছে বহু নাগরিক। আর বাদ পড়া বা মৃত ভোটারের সংখ্যা কমপক্ষে প্রায় ৭৫ লক্ষ। এর সঙ্গে ২৩ বছর অবৈধ ভোটারের তালিকা ধরলে সংখ্যা প্রায় কোটি ছাড়াতে পারে বলেই অনুমান।

আরও পড়ুনঃ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর থেকে ভার্জিনিটি সার্টিফিকেট চাইল মাদ্রাসা! লজ্জাজনক ঘটনা যোগীরাজ্যে

নতুন নাম নধিভুক্ত করা যাবে?

উল্লেখ করার বিষয়ে, যাদের নাম এখনও পর্যন্ত ভোটার তালিকায় নেই, তাদেরকে নতুন তালিকায় নাম তোলাতে হবে। তবে তারা কোনওরকম এনুমারেশন ফর্ম পাবে না, তাদের কমিশনের ৬ নম্বর ফর্মেই আবেদন করে নিজের নাম তালিকায় তুলতে হবে। আর কমিশনের আগের বেঁধে দেওয়া নিয়মের মাধ্যমেই এই নাম তোলা যাবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করার বিষয়, এসআইআর হলে ২০২৬ সালেই নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন, আর কোনও ভোটার যদি এসআইআরে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এমনকি সে বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে না।

Leave a Comment