প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এবার সন্দেশখালি ঘটনার প্রতিরূপ দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরেও! বেতাজ বাদশা তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহানের চরিত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল আরও এক তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখের। গ্রাম জুড়ে সন্ত্রাস, জুলুমবাজি ও অত্যাচারের একের পর এক ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ সকলে, আর তারই ফলস্বরূপ এবার ফিরোজ শেখের বিরুদ্ধে জোর জুলুমের অভিযোগ তুলে গ্রেফতারির আর্জি জানানো হয় জেলার পুলিশ সুপারের কাছে। আর তাই নিয়ে শুরু হয় তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব।
মসজিদের জমিতে জিম সেন্টার!
টিভি ৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে একের পর এক ভয়ংকর অভিযোগ। গায়ের জোরে জমি দখল থেকে শুরু করে সার কিনে টাকা না দেওয়া, মারধর, অত্যাচার অভিযোগ, সবকিছুর পিছনেই হাত রয়েছে এই দাপুটে নেতার। এবার সেই নিয়েই মুখ খুললেন অভিযোগকারী জমির মালিক স্থানীয় রফিউদ্দিন মল্লিক। তিনি বলেন, “এই জায়গাটা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। কয়েক পুরুষ ধরে ভোগ করছি। অনেক চেষ্টা করেছি, ওঁকে অনুরোধ করেছি যে কিছু টাকা অন্তত যেন দেয়, কিন্তু হাতে-পায়ে ধরেও পাইনি।” পুলিশ সুপারকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন চক্ষণজাদী গ্রামের মসজিদ ও স্কুলের সম্পত্তি পর্যন্ত ফিরোজ জবর দখল করে নিয়েছে। মসজিদ তহবিলের অর্থ হাতিয়ে নিতে ও মসজিদের জমিতে জিম সেন্টার গড়ে তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি সে।
কবে থেকে বেড়েছে এই দাপট?
জমি দখল করেই ক্ষান্ত হননি ফিরোজ শেখ, তার সঙ্গে গোটা গ্রাম জুড়ে রীতিমত জোর জুলুমের রেওয়াজ চালু করেছিলেন তিনি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্ত্রী হাসনারা বেগম ২০১৮ সাল থেকে পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাদশা মনে করতেন। তিনিও সন্দেশখালির শাহজাহানের মতো নিজের বাহিনী নিয়ে এলাকায় দাপট দেখাতেন। তাই এবার ফিরোজকেও জেলেবন্দি করার দাবিতে এককাট্টা হয়েছেন বেরুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদী, চককৃষ্ণপুর,শম্ভুপুর,জামুদহ সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা।
অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল নেতার
এদিকে গ্রামবাসীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছেন অভিযুক্ত ফিরোজ শেখ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে নিশানা করেছেন। তাঁর মতে, “বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁচ ভাঙা,লোহা ভাঙা কিনতেন। তখন কোনও রকমে ওদের দিন চলত। কিন্তু ২০১৩-তে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই নানা অনৈতিক উপায়ে অর্থ রোজগার করা শুরু করে। তাঁর কাজের প্রতিবাদ আমি করেছিলাম। তার বদলা নিতেই এলাকার লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।”
আরও পড়ুন: পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা, জঙ্গলে ফেললেন মোবাইল! ফের ED-র নজরে জীবনকৃষ্ণ সাহা
কটাক্ষ বিজেপির
বেরুগ্রাম আঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন আবশ্য ফিরোজের এইসব বক্তব্যকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “চোরের মায়ের বড় গলা। ওর সব অন্যায় ও অপকর্মের কথা আমি দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছি।” এদিকে তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের বিরুদ্ধে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই নিয়ে পুলিশ সুপার সায়ক দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এদিকে তৃণমূলের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূলের রাজত্বে গোটা বাংলাই এখন সন্দেশখালি। জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের এই ঘটনা শুধু একা ফিরোজ নয়, সেখানকার তৃণমূলের সভাপতি সহ ব্লক তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও সমান দোষী।”