প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আজ অর্থাৎ বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল আনতে চলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর সেগুলি হল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন (সংশোধনী) বিল ২০২৫, সংবিধান (১৩০ তম সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস (সংশোধনী) বিল ২০২৫। কিন্তু লোকসভায় ১৩০ তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কারণ এই নয়া সংশোধনী বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যেকোনো মন্ত্রীর উপর বড় প্রভাব পড়তে চলেছে। তাই এই নিয়ে সুর চড়ালেন বিরোধীরা। এমতাবস্থায় সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিল নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ অভিষেকের
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখেন যে, “কথায় কথায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoJK) পুনরুদ্ধারের দাবি করলেও বাস্তবে সরকারের কোনও সাহস নেই। সারা দেশের সমর্থন এবং বিরোধী শিবিরের সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও সরকার কেবল ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা কিংবা শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ, কোনও ক্ষেত্রেই কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।” তিনি আরও লেখেন যে, “এই কেন্দ্রীয় সরকার দিনের পর দিন নিজেকে জনবিরোধী, কৃষকবিরোধী, গরিববিরোধী, তফসিলি জাতিবিরোধী, উপজাতিবিরোধী, ওবিসি-বিরোধী, ফেডারেলবিরোধী এবং সর্বোপরি ভারতবিরোধী হিসেবে প্রমাণ করেছে। দেশের সংবিধান বিক্রি করছে। দেশটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাবছে।”
The Union Government, despite having the support of the Opposition parties and the entire nation, still lacks the courage to reclaim PoJK. It beats its chest with hollow rhetoric, but when it comes to defending India’s sovereignty, protecting our borders and acting firmly against…
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) August 20, 2025
রাজ্য সরকার ফেলার চেষ্টা কেন্দ্রের!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় আজ যে নয়া সংশোধনী বিল পেশ করতে চলেছেন তার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কেন্দ্র জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই রাজ্য সরকারকে ফেলতে সবরকম চেষ্টা করছে কেন্দ্র।” সব শেষে জনগণের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে দেশের আত্মা বিক্রি করে দেওয়া। তাই মহাত্মা গান্ধী ও আম্বেদকরের আদর্শে গড়া ভারত কখনওই তার আত্মা ক্ষমতালোভী শাসকের হাতে তুলে দেবেন না।”
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই নতুন বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোনও মন্ত্রী যদি গ্রেফতার হন এবং একটানা ৩০ দিন জেল হেফাজতে থাকেন, তাহলে ৩১তম দিনে তাঁকে হয় পদত্যাগ করতে হবে, নয়ত পদ থেকে সরানো হবে। এছাড়াও এই নতুন বিল অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরই নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদ থেকে সরাতেসরানোর সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পারবেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের কারচুপি রয়েছে বলে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম নিয়ে নয়া রণনীতি অভিষেকের, ওদিকে ভবানীপুরে সমীক্ষা চালাবেন শুভেন্দু
নতুন বিল নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিনা কারণে সিবিআই-ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের বা মুখ্যমন্ত্রীদেরও জেলে ভরা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়নি, কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জেলে ছিলেন। যদি এই বিল একবার আইন পরিণত হয়ে যায়, তাহলে বিরোধী নেতাদের ক্ষেত্রে বড় আকার ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে এই বিল আনার অর্থ হল নির্বাচিত বিরোধী সরকার ভেঙে দেওয়া। আর সেই বিষয়টি এবার সরাসরি উল্লেখ করেই পোস্ট করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।