প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই রাজ্য জুড়ে বেশ পারদ চড়ছে। নিজের দলকে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে রাজনীতিবিদরা একে অপরকে ক্রমাগত আক্রমণ করেই চলেছে। এবার সেই আক্রমণাত্মক যুদ্ধে পা গলালো সদ্য তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
অভিষেকের প্রশ্নে বিদ্ধ হুমায়ুন
ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ প্রবল হইচই শুরু করেছে। তার উপর আচমকাই নতুন দল গঠন, আর সেই নিয়ে উঠে আসা নানা প্রশ্নের উত্তরে শনিবার তৃণমূল ভবনে অভিষেক এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাকে যদি মন্দির-মসজিদের রাজনীতি করতে হয়, তা হলে বিজেপির সঙ্গে পার্থক্য কী রয়েছে? বিজেপি মন্দির তৈরির রাজনীতি করছে। আপনি মসজিদ তৈরির রাজনীতি করছেন। এই হুমায়ুন ২০১৯-এ বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদের ঘটনা ঘটেছিল। যে দল বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল, সেই দলের প্রার্থী হতে আপনি দিল্লি গিয়েছিলেন এটা তখন আপনার খেয়াল ছিল না?” আর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বড় আকার ধারণ করে। এবার সেই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পাল্টা জবাব দিলেন হুমায়ুন কবীর।
পাল্টা জবাব হুমায়ুনের
গতকাল এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন কবীরকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ” যদি রাজনীতিতে থেকে মন্দির-মসজিদ করা উচিত নয়, তাহলে অভিষেক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলুক তিনি যেন রাজনীতি ছেড়ে দেন। তাহলে হুমায়ুনও রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে মসজিদ নিয়ে থাকবে। আর আমার দল চলবে দলের মতো করে।” শুধু তাই নয়, এছাড়াও হুমায়ুন আরও জানিয়েছেন যে, “পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে যে ভাবে দিঘাতে নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে গিয়েই ওঁকে ধর্মকর্ম নিয়ে থাকতে বলুন। উনি যদি তা করেন, আমি বাংলার মানুষকে কথা দিচ্ছি, আমিও শুধু বাবরি মসজিদ নিয়ে থাকব। আমার দলের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়ে দেব।”
মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার চ্যালেঞ্জ
এদিন সাক্ষাৎকারে ধর্ম-কর্ম নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেন ভরতপুরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর। এছাড়াও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী নিয়েও একাধিক মন্তব্য করেন তিনি। হুমায়ুন বলেন, “যদি ভবানীপুর থেকে অভিষেক প্রার্থী হন, তাহলে আমার দল প্রার্থী দেবে না। আর যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা শুভেন্দু অধিকারী দাঁড়ান, তাহলে দেবই।” পাশাপাশি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যও অভিষেককে চ্যালেঞ্জ হুমায়ুন স্পষ্ট বলেছেন, “অভিষেকের যদি সাহস থাকে, জনসংযোগ থাকে এবং আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে যেন ২০২৬-এ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে ভোটে লড়েন। মানুষের কাছে অভিষেক ঠিক কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা তখনই বোঝা যাবে।”
আরও পড়ুন: ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ড বিরাটিতে! পুড়ে ছাই যদুবাবুর বাজারের শতাধিক দোকান
প্রসঙ্গত, হুমায়ুন কবীর ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’ নামে দল ঘোষণা করলেও সেই দলকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এমনকি হুমায়ুন কংগ্রেস অথবা সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতার বার্তা দিলেও সেক্ষেত্রেও এই দুই দল কোনো পাত্তা দেয়নি। এদিকে এত কিছু জানার পরেও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করেন হুমায়ুন। তবে এ কথাও জানান যে, ইদানিং তিনি রাজনীতির ময়দানে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।