প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডে নেতা মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে টাকা ও সোনা উদ্ধারের ঘটনা প্রায়শই খবরের শিরোনামে উঠে আসে। কখনও খাটের নীচ থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার হয় তো কখনও আবার গুদাম ঘর কিংবা গোয়ালে থেকে উদ্ধার হয় টাকা। তবে এবার সেই সব ঘটনা হার মানল। একেবারে ফিল্মি কায়দায় সিঁথিতে লুট করা সোনা (Sinthi Gold Robbery Case) উদ্ধার করল লালবাজার গোয়েন্দা পুলিশ। ফ্রিজের সবজি রাখার ট্রে-র মধ্যে শীতের সবজি সরিয়ে পালংয়ের আঁটি খুলতেই তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার সোনা।
সোনা লুটের ঘটনায় নয়া মোড়!
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর সিঁথির এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জিতকুমার দাসের কাছ থেকে লুট করে নেওয়া হয়েছিল ২ কেজি ৩৮০ গ্রাম সোনা, যার বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। বড়বাজার থেকে সেই পরিমাণ সোনার বাট নিয়ে নিজের স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিলেন সঞ্জিত। কিন্তু সিঁথিতে নিজের ওয়ার্কশপে ঢোকার মুখে আচমকা একটি বাইকে চেপে আসা কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবক পিস্তল দেখিয়ে তাঁর পথ আটকান এবং সোনা নিয়ে করে পালান তাঁরা। সেই ঘটনায় আগেই দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি ডাকাতি গ্যাংয়ের মাথা ইজরায়েলকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
হুগলির খানাকুলে তদন্ত গোয়েন্দা আধিকারিকের
কিছুদিন আগেই সিঁথির ব্যবসায়ীর কাছে সোনা লুঠের ঘটনায় আরও এক জনকে কলকাতা স্টেশনের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করেছিল গোয়েন্দারা। তিনি ছিলেন ওই ঘটনায় ডাকাতি গ্যাংয়ের মাথা, নাম ইজরায়েল। আর তাকে পরে জেরা করে পুলিশ জানিয়েছে যে, ইজরায়েল ও উত্তরপ্রদেশের আব্বাস ওই লুটের সোনা অর্ধেক করে ভাগের ছক কষে। এদিকে ইজরায়েলের কাছে লুট করা সোনা গচ্ছিত রয়েছে জানার পর সোনা উদ্ধার করতে নামে লালবাজার গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু তদন্তের সময় সে কিছুতেই সাহায্য না করায় শেষপর্যন্ত আধিকারিকরা ইজরায়েলকে নিয়েই হুগলির খানাকুলে তার বাড়িতে নিয়ে যান। একেক বার সে একেক জায়গায় সোনা রেখেছে বলে জানাতে থাকে। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত ছিল যে, ইজরায়েলের বাড়িতেই রয়েছে সোনা। তারপর তন্নতন্ন করে খুঁজতেই বেরিয়ে আসে সোনা।
ফ্রিজ থেকে বেরোল ১,২০০ গ্রাম সোনা
সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা ধৃত ইজরায়েলের বাড়ির আলমারি থেকে খাটের তলা, সব জায়গায় তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালান। শুধু বাকি থাকে রান্নাঘর, সেখানে খুঁজতেই বেরিয়ে আসে লুট করা সোনা। রান্নাঘরের ফ্রিজ খুলে সমস্ত জায়গায় খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। ডিপ ফ্রিজে দেখেন মাছ-মাংস রয়েছে। অন্যদিকে ফ্রিজের তলার দিকে সবজির ট্রের মধ্যে রয়েছে ভর্তি শাকপাতা ও পালংশাক। কিন্তু পালংশাকের পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকায় গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ জাগে। তাই সঙ্গে সঙ্গে খুলতে শুরু করেন পালং শাকের আঁটি। শেষ পর্যন্ত পালংয়ের আঁটি খুলতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সোনা। ওই সোনার পরিমাণ প্রায় ১,২০০ গ্রাম।
আরও পড়ুন: “অপদার্থ আয়োজক..কিছু লোকের হ্যাংলামি…,’ যুবভারতীতে মেসি উৎসবে আয়োজকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ কুণাল,
লালবাজার গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, আরেক অভিযুক্ত গাজিপুরের বাসিন্দা পলাতক আব্বাসকে গ্রেপ্তার করলে বাকি সোনার হদিশ মিলতে পারে। যদিও সে আদৌ উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে গা ঢাকা দিয়েছে, নাকি অন্য কোথাও, তা নিয়ে গোয়েন্দারা সন্দিহান। অতীতে এই দুই ধৃত এক সঙ্গে এ ধরনের কোনও লুটের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। লুট হওয়া পুরো সোনার খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও তাই তদন্ত জারি রয়েছে।