বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: সময় মতো স্টেশনে পৌঁছনোর পরও ট্রেন মিস হয়ে গেলে, যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেবে রেল! সম্প্রতি এমনই রায় দিয়েছে আদালত। জানা যাচ্ছে, এক ভারতীয় নাগরিক তাঁর পরিবার নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে পৌঁছনোর পরও ট্রেন না পাওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, এবার সেই মামলাতেই রেলের কোর্টে বল ঠেলে দিলেন বিচারপতিরা!
ক্ষতিপূরণ মামলায় যাত্রীর পক্ষে রায় দিল আদালত
ঘটনাটি গত বছর অর্থাৎ 2024 সালের 29 ফেব্রুয়ারির। উত্তর রেলওয়ের গাজিয়াবাদের মুরদাননগরের বাসিন্দা অনুভব প্রজাপতি ও তাঁর স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ছত্তিশগড় এক্সপ্রেসে ঝাঁসি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাজিয়াবাদ স্টেশনে পৌঁছেছিলেন। ওই পরিবারের ট্রেন ছিল ভোর 3.20 নাগাদ। সেই টাইমিং মাথায় রেখেই নির্ধারিত সময়ে গাজিয়াবাদ স্টেশনের ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা।
এমতাবস্থায়, স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হয় ছত্রিশগড় এক্সপ্রেস 40 মিনিট লেটে রান করছে। এমন ঘোষণার পরই ভোর 3.25 নাগাদ 3 নম্বর প্ল্যাটফর্মে যায় ওই পরিবার।। যদিও সেখানে দাঁড়িয়েছিল অযোধ্যা এক্সপ্রেস। দীর্ঘ 45 মিনিট সময় ধরে ওই পরিবার পর্যবেক্ষণ করে অযোধ্যা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেখানেই দাঁড়িয়েছিল। ঠিক ওই সময়ের মধ্যে ছত্তিশগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের কোনও ঘোষণা হয়নি।
এদিকে পরিবারের কর্তা প্রজাপতি স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে স্টেশন মাস্টারের রুম ছিল তালা বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে অনুভব বাবু বিরক্ত হয়ে ভোর 5.21 নাগাদ রেলের কর্মকর্তাদের ফোন করেন, কিন্তু সেখান থেকে কোনও রকম সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে ভোর 6 টায় তিনি জানতে পারেন ছত্রিশগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি 3 নম্বরের বদলে 2 নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে গেছে। শেষমেষ গোটা বিষয়টি ওঠে জেলা গ্রাহক আদালতে।
অবশ্যই পড়ুন: ফিরছেন আইয়ার, প্রায় চূড়ান্ত দল! দেখে নিন এশিয়া কাপে টিম ইন্ডিয়ার সম্ভাব্য স্কোয়াড
ফোরামে বিচারকদের শুনানির সময়, রেলের কর্মকর্তারা লিখিতভাবে কোনও রকম উত্তর দেননি। যদিও পরবর্তীতে রেলের আইনজীবী বলেছিলেন যে, ট্রেনটি তিন ঘন্টার বেশি দেরিতে চললে টাকা ফেরত দেওয়া যেত, কিন্তু ওই ট্রেনটি অতটাও দেরিতে চলছিল না। এদিকে ফোরাম স্বীকার করেছে যে টাকা ফেরত দেওয়ার মতো কোনও প্রযুক্তিগত কারণ নেই, তবে ট্রেনের আগমন এবং প্রস্থানের সঠিক সময় ঘোষণার অভাবে ট্রেনটি মিস করেছিলেন প্রজাপতি পরিবার। শুধু তাই নয়, রেলের চূড়ান্ত অব্যবস্থার জন্যই ওই পরিবারকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল।
মূলত সেই কারণেই ফোরাম জানিয়েছে, রেল ওই এক্সপ্রেস ট্রেনের ঘোষণা সংক্রান্ত কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি। রেল এও প্রমাণ করতে পারেনি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। আর এরপরই গত 23 জুন গাজিয়াবাদ স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক ও উত্তর রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারকে 45 দিনের মধ্যে ওই পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে জেলা আদালতের রায়ের পর উত্তর রেলওয়ে জানিয়েছে, প্রথমে গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে। খতিয়ে দেখা হবে যে আদৌ কোনও ঘোষনা হয়েছিল কিনা। যদি শেষ পর্যন্ত তা না হয়, তবেই নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ওই পরিবারকে।