বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: চোখের পলকে বদলে গেল ভারতের ভূমিকম্প মানচিত্র (India New Seismic Map)! মূলত দেশের যেসব অঞ্চলকে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে সিসমিক জোনের তালিকা ব্যবহার করা হয়, এবার সেই তালিকাতেই বড় পরিবর্তন এসেছে। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলির নিরিখে ভারতকে মূলত 5টি জোন মিলিয়ে 5টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। তবে ভূত্ববিদরা মানচিত্রটি পরীক্ষা করে তাতে নতুন অঞ্চল হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন জোন 6-কেও।
নতুন মানচিত্রে বেড়েছে উদ্বেগ
ভিশন IAS এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন সিসমিক মানচিত্রে ভারতের গোটা হিমালয় পর্বতমালা বা পার্বত্য এলাকাকে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এতদিন ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে ভারতকে মূলত পাঁচটি এলাকা বা জোনে ভাগ করা হতো। যা মূলত জোন 1 থেকে জোন 5 এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এবার নতুন করে ভূমিকম্প মানচিত্র পরিমার্জন করার পর সেই মানচিত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন এলাকা। মূলত ভূমিকম্প প্রবণতার নিরিখে নতুন অঞ্চলটিকে মানচিত্রে যুক্ত করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে জোন 6।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, নতুন মানচিত্র তৈরি হলেও ভূমিকম্পের দিক থেকে বেড়েছে উদ্বেগ। আসলে এতদিন ভারতের ভূমিকম্প মানচিত্র যেহেতু 5টি জোনে সীমাবদ্ধ ছিল তাই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে ভারতীয় ভূখণ্ডের পরিমাণ ছিল কম। তবে এবার নতুন অঞ্চল জুড়ে যাওয়ায় ওই মানচিত্র অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তত 61 শতাংশ অঞ্চলই এখন ভূমিকম্পপ্রবণ। বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী দিনে এই পরিমাণটা আরও বাড়তে পারে!
কোন এলাকা কোন জোনে?
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ভারতের 6 ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বা জোন 6 এর মধ্যে জোন 1 আলাদা করে উল্লেখ করা হয় না। এটিকে জোন 2 এর মধ্যেই ধরা হয়। জোন 2 প্রসঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে গেলে এটি মূলত ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল এবং দেশের পূর্ব উপকূলের কিছু অংশ। জোন 3 এর মধ্যে পড়ে কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই, লখনউয়ের মতো বেশ কিছু বড় শহর। যে জায়গা গুলিতে ভূমিকম্পের আশঙ্কা মাঝারি মাত্রার। জোন 4 এর আওতায় রয়েছে হাই ড্যামেজ বা উচ্চ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার এলাকা যেমন রাজধানী দিল্লি, লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড সহ গাঙ্গেয় সমভূমির বেশ কিছুটা এলাকা।
অবশ্যই পড়ুন: শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করল SSC, জমা পড়ল ৮ লক্ষ আবেদন
ভারতের ভূমিকম্প মানচিত্রে জোন 5 এর মধ্যে রয়েছে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর-পূর্ব ভারত সহ কচ্ছের রন। এবার আসা যাক তালিকায় নতুন সংযোজন জোন 6 প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলে রাখি, ভারতের হিমালয় পর্বতমালা বা পার্বত্য অঞ্চলকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা বা রেড জোন অথবা জোন 6 হিসেবে ধরা হয়। এর কারণ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ভোপালের কয়েকজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, নতুন মানচিত্র তৈরির সময় পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সিসমিক স্টেশন থেকে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেই বিপুল তথ্য বিশ্লেষণের পরই মানচিত্র পরিমার্জন করেছেন ভূতত্ত্ববিদরা।
এ প্রসঙ্গে আরেক অধ্যাপকের বক্তব্য, “হিমালয় পর্বতমালা বা পার্বত্য অঞ্চলকে সর্বোচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে দেখানোর কারণ ভূতত্ত্বের দিক থেকে হিমালয়কে একটি আলাদা প্রতিষ্ঠন বলা হয়ে থাকে। এটি আসলে ইউরেশিয়ান প্লেট এবং ইন্ডিয়ান প্লেট এর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট। এছাড়াও হিমালয়ের নিচে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চ্যুতিরেখা। যেগুলি মূলত মেন সেন্ট্রাল থ্রাস্ট, মেন ফ্রন্টাল থ্রাস্ট এবং মেইন বাউন্ডারি থ্রাস্ট হিসেবে পরিচিত। আগে যেহেতু সিসমিক মানচিত্রে হিমালয়ের দীর্ঘ চ্যুতি রেখাগুলি শান্ত ছিল তাই এগুলিকে হিসেবে মধ্যে ধরা হতো না। তবে এই মুহূর্তে মানচিত্রে পুরো এলাকাটাই ডেঞ্জার জোন বা রেড জোন হিসেবে জায়গা পেয়েছে।