প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সদ্য শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এরপরই তাঁর উদ্যোগে মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েই চলেছে। শনিবার বহু বিতর্কের মধ্যেই মসজিদের শিলান্যাস সুসম্পন্ন হয়েছে। এবার সেই মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সামনে এল টাকার পাহাড়ের ছবি। জানা গিয়েছে, হুমায়ুন কবীরের (Humayun Kabir) বাড়িতে এনে রাখা হয়েছে ১১টি বড় ট্রাঙ্ক, যার প্রতিটিই ডোনেশনে ভর্তি। আর এই বিপুল টাকা গোনার জন্য নাকি ভাড়া করা হয়েছে বিশেষ টাকা গোনার মেশিনও।
QR কোড স্ক্যান করেই লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন
রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনকে স্মরণে রেখেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন সাসপেন্ডেড তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেইদিনই তিনি সগৌরবে জানিয়েছিলেন যে বাবরি মসজিদ তৈরি করতে খরচ হবে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা। তবে টাকা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করছেন না হুমায়ুন, কারণ অনেকেই এই মসজিদ নির্মাণের জন্য বহু টাকা দিচ্ছেন। হুমায়ুন কবীর নিজেই দাবি করেছেন, শুধুমাত্র QR কোড স্ক্যান করেই জমা পড়েছে প্রায় ৯৩ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তিনি দাবি করেছেন যে আরও এক ব্যক্তি আছেন যিনি নাম প্রকাশ্যে আনতে মানা করেছেন সেই ব্যক্তিই নাকি ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেবেন বাবরি মসজিদ তৈরির জন্য। তাতেই যেন কপাল খুলে গেল হুমায়ুনের।
টাকা গোনার জন্য আনা হল মেশিন!
হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ যে তৈরির আগেই কতটা জনপ্রিয় হয়েছে, তা অনুদানের বহর দেখেই বোঝা গেল। তাইতো পাহাড় সমান টাকা গোনার জন্য ইতিমধ্যেই নিয়ে আসা হয়েছে বিশেষ মেশিন। এছাড়াও টাকা গোনার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৩০ জন মানুষকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিরন্তর চলছে ডোনেশন গণনার কাজ। রাত ১২টার পরও চলে টাকা গোনা। এখনও পর্যন্ত ৭টি ট্রাঙ্ক খোলা হয়েছে, তা থেকে ৩৭ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ মোট ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। হুমায়ুনের দাবি, মুর্শিদাবাদ ছাড়াও বীরভূম, মালদা থেকেও একাধিক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা চাইছেন সেই জেলাগুলোতেও ‘বাবরি মসজিদ’-এর মতো প্রকল্প হোক। হুমায়ুন জানিয়েছেন, বীরভূমের রামপুরহাট, সিউড়ি থেকেও প্রস্তাব এসেছে।
আরও পড়ুন: গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি নিয়োগে নয়া মোড়! হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে SSC
প্রসঙ্গত, সমগ্র রাজ্যজুড়ে হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ নির্মাণের এই প্রচারকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। একাংশের দাবি, এই রাজনৈতিক ভোলবদলই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ প্রকল্প এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে তিনি চলতি মাসেই নতুন দল গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে জানাচ্ছেন তাঁর দলের সঙ্গে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং ISF চাইলে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে। যদিও কংগ্রেস কিংবা সিপিএম—কোনও দলই হুমায়ুনের নতুন দল গঠনের ঘোষণাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এগুলো নিছক রাজনীতি উত্তপ্ত রাখার কৌশল। তবে এইমুহুর্তে হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ-এর জন্য জমতে থাকা টাকার পাহাড় রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।